কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, দীপক ঘোষ, আশাবুল হোসেন, কলকাতা: কোন্দল থামছে না রাজ্য বিজেপিতে। জয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন,  দলটা জগাখিচুড়ি হয়ে গেছে। দেখে লজ্জা লাগছে।  প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো চিঠিতে চন্দ্র বসু লিখেছেন, নিজেদের দোষেই বাংলা জয়ের সুযোগ হারিয়েছে বিজেপি।  এ ব্যাপারে বিজেপি নেতৃত্ব দায় এড়িয়ে মন্তব্য করেছে যে, দুই নেতার মত ব্যক্তিগত। 


 যদিও দুই নেতার মন্তব্যে রাজ্য বিজেপিতে আরও প্রকট হল দ্বন্দ্ব।একদিকে যখন সৌমিত্র, সব্যসাচী, রাজীবদের সামলাতে কার্যত দিশেহারা দল, তখন দলের সমালোচনায় সরব হলেন জয় বন্দ্যোপাধ্যায়, চন্দ্র বসুরা। সেই সঙ্গে উস্কে গেল দলবদলের জল্পনা। 


২০১৬-তে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর প্রপৌত্র চন্দ্র বসু। ১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে, কলকাতা দক্ষিণে তাঁকে প্রার্থী করে বিজেপি। যদিও জয়ের মুখ দেখতে পারেননি তিনি। রাজ্য বিজেপির সহ সভাপতি ছিলেন তিনি।  


কিন্তু, পদ দিলেও তাঁকে কাজের সুযোগ দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ চন্দ্র বসুর।  তিনি বলেছেন, ২০১৬-তে কাজের জন্য বিজেপিতে যোগ দিয়েছি। সহ সভাপতি করা হয়েছিল, মিটিং-মিছিলে যাওয়া ছাড়া কাজ নেই, যদিও কাজের সুযোগ না পাই, তাহলে অন্য চিন্তাভাবনা করতে হবে। দলে থেকে কাজ না করলে কোনও লাভ নেই।


এই প্রেক্ষাপটে দেখা করতে চেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিও লিখেছেন চন্দ্র বসু। তাঁর দাবি সেখানে তিনি জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গবাসীর মন পেতে স্বামী বিবেকানন্দ, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হতে হবে। সব ধর্মকে একত্রিত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী যেখানে বার্তা দিয়েছেন - সবকা সাথ সবকা বিকাশ, সেখানে ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রচারে উঠে এসেছে সাম্প্রদায়িক রূপ। আমরা (বিজেপি) ভোটে জেতার সুবর্ণ সুযোগ নিজেদের দোষে হারিয়েছি।


একইভাবে দলের সমালোচনায় সরব জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি বলেছেন,  আজ বিজেপিকে দেখে লজ্জা হচ্ছে, দুঃখ লাগছে। কাদা ছোড়াছুড়ি, এ ওর নামে বলছে। এ এগিয়ে যাচ্ছে তো ও টেনে ধরার চেষ্টা করছে। জগাখিচুড়ি বিজেপি হয়ে গেছে। এই যে গতকাল থেকে শুরু হয়েছে, একটা কেউ পদত্যাগ করছে, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বলছে পদত্যাগ ফিরিয়ে নিচ্ছি। এই সব নটঙ্কিপনা বিজেপিতে চললে, তাতে আপনারা যে যাই মনে করুন, আমি বলে রাখলাম মমতা-অভিষেকের কাছে পঞ্চায়েত ও পুরসভায় ডজন ডজন গোল খাবেন। 


যদিও, দুই নেতার এই অবস্থানকে গুরুত্ব দিতে নারাজ রাজ্য বিজেপি। রাজ্য বিজেপির সহ সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার বলেছেন, ব্যক্তিগত মত, কোনও মন্তব্য করব না। সব ভারতবাসীর মতো তাঁরাও মত প্রকাশ করেছেন। 


বিজেপি অন্দরের এই অস্বস্তি নিয়ে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল। চন্দ্র বসুর মন্তব্য সম্পর্কে রাজ্যের দমকলমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা সুজিত বসু বলেছেন, এই বোধদয় এতদিন পর হল? আগে হলে ভাল হতো। ভারত ধর্মনিরপেক্ষ দেশ, তৃণমূল বরাবরই ধর্মীয় ভেদাভেদের বিরুদ্ধে। 


জয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য নিয়ে তাঁর কটাক্ষ, আরও কাদা ছোড়াছুড়ি বাড়বে, নীতিহীন দল হলে যা হয়।


সব মিলিয়ে ভোটের হারের পর বিজেপির অন্দরে কাটাছেঁড়া তুঙ্গে।