কলকাতা: রাজ্যে ফের জালনোট চক্রের পর্দাফাঁস! শিলিগুড়িতে গোয়েন্দা জালে জালনোট কারবারের অন্যতম দুই পাণ্ডা। বড়সড় সাফল্য রাজ্য সিআইডির।
শনিবার রাতে শিলিগুড়ির প্রধান নগরে অভিযান চালায় সিআইডির স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, ধৃত প্রদীপ গগৈ অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী, তিনি অসমের বাসিন্দা। সুধীর সরকার ওরফে মণ্ডলের বাড়ি মালদায়।
সূত্রের খবর, ধৃতদের ওপরে গত ৬-৭ মাস ধরে নজরদারি চালাচ্ছিলেন গোয়েন্দারা। সবকিছু নিশ্চিত হতেই শনিবার রাতে প্রধাননগরে হাতেনাতে এদের ধরা হয়। উদ্ধার হয় ৪৪ হাজার টাকার জাল নোট।
বিগত দিনে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জাল নোটের কারবারিদের ধরতে সক্ষম হয়েছে গোয়েন্দারা। এবার আরও বড় সাফল্য। হেফাজতে নিয়ে ধৃত কাছ থেকে গোয়েন্দারা জানতে চান, ভারতের মাটিতে বসে কারা জালনোটের কারবার চালাচ্ছে? সুনির্দিষ্টভাবে কোন কোন পথে ভারতে ঢুকছে জালনোট? দেশের মাটিতে জালনোট ছড়িয়ে দিচ্ছে কারা? অপরাধের এই নেটওয়ার্কে আর কারা কারা জড়িত?
সূত্রের খবর, এই দু’জন মালদা থেকে শিলিগুড়ি হয়ে বিভিন্ন জায়গায় জাল নোট পাচার করত। আর এখানেই উদ্বেগ বাড়ছে গোয়েন্দাদের। তাঁদের ধারনা, এই চক্রের সঙ্গে জঙ্গি-যোগ থাকতেও পারে।
যেমন গোয়েন্দাদের মতে, পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর কৌশলই হল, একদিকে ভারতে সরাসরি নাশকতা ঘটানো। আরেকদিকে, প্রচুর পরিমাণে জাল নোট ঢুকিয়ে এদেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেওয়া।
আর তার ফলেই এখন, দেশজুড়ে মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে জাল নোটের কারবার। আর এই কারবারে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে যোগ থাকে সন্ত্রাসের কিং-পিনদের! গোয়েন্দা সূত্রে খবর, মূলত তিনটি উপায়ে বাজারে জাল নোট ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ চলে।
প্রথমত, জঙ্গিদের কাছে সরাসরি জাল টাকা পৌঁছে দেওয়া হয়। দ্বিতীয় পদ্ধতি হিসেবে, জঙ্গি মডিউলগুলোকে এই কাজে লাগানো হয়। তৃতীয়ত, মোটা টাকা কমিশনের লোভ দেখিয়ে সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষদের জালনোট ছড়িয়ে দেওয়ার কাজে ব্যবহার করা হয়।
ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অত্যন্ত বড় বিপদ এই জালনোট। এদেশে জাল নোট ঢোকাতে একাধিক রুট ব্যবহার করে কারবারিরা। লত, পাকিস্তান থেকে নেপাল হয়ে মালদায় আসে জাল নোট। একইভাবে পাকিস্তান থেকে কখনও বাংলাদেশ হয়ে, কখনও আবার মায়ানমার হয়েও জাল নোট ছড়িয়ে পড়ে এদেশে।
তবে, সম্প্রতি খাগড়াগড়কাণ্ডে ধৃত ৬ জামাত জঙ্গিকে জেরা করে কলকাতা পুলিশের এসটিএফ জানতে পেরেছে, এখন মালদার থেকেও জালনোট পাচারে জঙ্গিদের পছন্দের রুট অসম সীমানা। অসমের বরপেটা, কাছার সীমানা দিয়ে জঙ্গিরা জাল নোট পাচার করে কোচবিহারে। সেখান থেকে জালনোট চলে আসে উত্তর ২৪ পরগনার বাগদায়, এরপর বসিরহাট, তারপর কলকাতা।
জঙ্গি নেটওয়ার্কের সঙ্গে এই জালনোটের সম্পর্ক যে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ, তা বারবার প্রমাণিত হয়েছে। জামাত জঙ্গি ইউসুফ-সহ ছ’জনের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে জাল নোট। গত বছর কলকাতায় ধৃত সন্দেহভাজন পাক চরদের কয়েকজনের কাছেও জাল নোট পাওয়া যায়!
পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যে জালনোট পাচারচক্রের কোমর ভাঙতে, খোদ জাতীয় তদন্তকারী সংস্থাকেও বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া মালদার বৈষ্ণবনগরে ক্যাম্প করতে হয়েছে!
জালনোটের কারবার বন্ধে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সীমান্তরক্ষী বাহিনীকেও! এনআইয়ের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করছে তারা। বিএসএফ সূত্রে দাবি, শুধু তারাই চলতি বছরে, ১ কোটি ২২ লক্ষ ৪৪ হাজার টাকার জাল নোট বাজেয়াপ্ত করেছে। ধরে পড়েছে ১৬ জন পাচারকারী।
ধৃতদের বিরুদ্ধে শিলিগুড়ির প্রধাননগর থানায়, ‘ষড়যন্ত্র করে জাল নোট পাচার চক্র চালানো’র অভিযোগে মামলা রুজু করেছে সিআইডি। ধৃতদের জেরা করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী গোয়েন্দারা।
জালনোট চক্রের পর্দাফাঁস! শিলিগুড়িতে ধৃত অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী সহ ২ পাণ্ডা, জঙ্গি যোগের আশঙ্কা
ওয়েব ডেস্ক, এবিপি আনন্দ
Updated at:
16 Oct 2016 06:11 PM (IST)
NEXT
PREV
রাজ্য (states) লেটেস্ট খবর এবং আপডেট জানার জন্য দেখুন এবিপি লাইভ। ব্রেকিং নিউজ এবং ডেইলি শিরোনাম দেখতে চোখ রাখুন এবিপি আনন্দ লাইভ টিভিতে ।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -