সনৎ ঝা, শিলিগুড়ি: ভুয়ো ভ্যাকসিনকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত ভুয়ো আইএএস দেবাঞ্জন দেবের বিষয়ে প্রতিদিন নতুন নতুন প্রতারণাকাণ্ডের ঘটনা প্রকাশ্যে আসছে।
এবার সামনে এল ভুয়ো আইএএসের উত্তরবঙ্গ-যোগ। শিলিগুড়ির বাসিন্দা সৌভিক মজুমদারের দাবি, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে কলকাতার একটি অনুষ্ঠানে দেবাঞ্জনের সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়।
নিজেকে আইএএস পরিচয় দিয়ে শিলিগুড়িতে এসেছিলেন দেবাঞ্জন। সৌভিককে ২টি গান লিখে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। সৌভিককে নিয়ে যান কালিম্পঙের একটি ট্যুরিস্ট লজে।
অভিযোগ, সেখানেই চা বাগানের সমস্যা নিয়ে টি বোর্ডের ধাঁচে আলাদা পর্ষদ গড়া এবং তার দায়িত্ব সৌভিককে দেওয়া হবে বলে দেবাঞ্জন আশ্বাস দেন।
এই ঘনিষ্ঠতার সূত্র ধরেই ২০১৮ সালে তিনি সৌভিকের কাছ থেকে ৩ লক্ষ টাকা চান। লাখ খানেক টাকা শোধ হলেও, বাকিটা ফেরত পাননি বলে শিলিগুড়ির ওই বাসিন্দার অভিযোগ।
অভিযোগকারীর দাবি, কলকাতায় দেবাঞ্জনের মাদুরদহের বাড়িতেও যান তিনি। নেমপ্লেটে আইএএস লেখা দেখে দেবাঞ্জনের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হন।
এখন, ভুয়ো ভ্যাকসিনকাণ্ড প্রকাশ্যে আসতেই এতদিন পর মুখ খুলেছেন শিলিগুড়ির ওই বাসিন্দা।
ভুয়ো ভ্যাকসিনের ভায়ালে কী ধরনের কম্পোজিশন ছিল, তা নিশ্চিত হতে নাইসেডে ভায়াল পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছে পুলিশ। ইতিমধ্যেই প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দিয়েছে রাজ্য ফরেন্সিক ল্যাবরেটরি। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, ভায়ালের গায়ে লাগানো ছিল নকল স্টিকার।
কোভিশিল্ড ও স্পুটনিকের নামে অ্যামিকাসিন এবং ন্যাডিকোর্ট জাতীয় ইঞ্জেকশনের তরল ব্যবহার করা হয়, ফরেন্সিকের টক্সিকোলজি বিভাগে টেস্ট চলছে। দেখা হচ্ছে এর মধ্যে বিষক্রিয়ার সম্ভাবনা আছে কি না।
এদিকে, কলকাতা পুরসভার নাম ব্যবহার করে দেবাঞ্জন নানা প্রতারণা কাণ্ড ঘটানোর পর এবার পুরসভায় নিরাপত্তার কড়াকড়ি। কলকাতা পুরসভার অন্দরের সুরক্ষায় নজর দিয়েছে পুর-কর্তৃপক্ষ।
কলকাতা পুরসভা পুর-প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম বলেন, পুরসভার সমস্ত কর্মীদের আই কার্ড গলায় ঝোলানো বাধ্যতামূলক করা হলো। বেশিরভাগ পরিষেবা অনলাইনে পাওয়া যায়। এর বাইরে কেউ যদি পুরসভায় কোন কারনে আসে তাহলে নির্দিষ্ট রিসেপশনে জানিয়ে পুরসভায় প্রবেশ করতে পারবে।
সব মিলিয়ে ভুয়ো ভ্যাকসিনকাণ্ড ঘিরে চড়ছে রাজনীতির পারদ। বাড়ছে গ্রেফতারির সংখ্যা। দেবাঞ্জনের প্রতারণা-র শিকড় কতদূর অবধি ছড়িয়েছে, তার খোঁজ করছেন গোয়েন্দারা।