কলকাতা : রাজ্যে ভোট-পরবর্তী হিংসা মামলায় কলকাতা হাইকোর্টে সওয়াল-জবাব শেষ হল। এদিনের শুনানিতে আদালতে রাজ্য পুলিশের ডিজির হয়ে সওয়াল করলেন অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি। তিনি তাঁর সওয়ালে বলেছেন, ‘জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের বিশেষ দলের রিপোর্ট ধাঁধার মতো। এই রিপোর্ট ত্রুটিপূর্ণ’।
উল্লেখ্য, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কমিটির সদস্যদের রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলেছে রাজ্য। এ ব্যাপারে কমিশনের রিপোর্টের কড়া জবাব হাইকোর্টে পেশ করা হয়েছে। জবাবে বলা হয়, ‘এক্তিয়ার বহির্ভূত কাজ করেছে। মানবাধিকার কমিশনের বিশেষ দল। মানবাধিকার কমিশনের বিশেষ দল পক্ষপাতদুষ্ট। এই দল রাজ্য সরকার বিরোধী। দলের সদস্যদের বিজেপি বা কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। মানবাধিকার কমিশনে বেছে বেছে নিয়োগ করা হয়েছে। রাজ্য সম্পর্কে নেতিবাচক রিপোর্ট দেওয়ার জন্যই নিয়োগ করা হয়েছে। মিথ্যা সাক্ষ্য সংগ্রহের জন্য দল গিয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায়। দলের থাকা-খাওয়া বাবদ রাজ্যের খরচ হয়েছে প্রায় ৮ লক্ষ টাকা।'
এদিনের সওয়ালে অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, ‘এই কমিটির ২-৩ জন সদস্যের ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছি।সহজাতভাবেই বোঝা যায় এরা পক্ষপাতদুষ্ট। একজন সদস্যর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে, সেই রিপোর্ট খারিজ করা উচিত। এই রিপোর্টকে কলুষিত বলে আখ্যা দেওয়া উচিত।’
আদালতে রাজ্য পুলিশের ডিজির হয়ে সওয়ালে সিঙ্ঘভি আরও বলেছেন, ‘এই কমিটির সদস্য শ্রীযুক্ত দেশাই সরাসরি বিজেপির সঙ্গে যুক্ত। এই কমিটি এবং তার রিপোর্ট গোটা প্রক্রিয়াকে কলঙ্কিত করছে।অভিযোগপত্রের ধরন দেখে মনে হচ্ছে যেন এগুলো আগে তৈরি ছিল। বেশিরভাগ অভিযোগের সঙ্গে ভোট পরবর্তী হিংসার যোগ নেই। অভিযোগকারীদের বাংলায় জানানো অভিযোগ পাল্টে দিয়েছে কমিটি। বক্তব্যের বিকৃতি ঘটানো হয়েছে।’
কেন্দ্রের পক্ষের আইনজীবী ওয়াই জে দস্তুর তাঁর সওয়ালে বলেন, ‘ জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কমিটি আদালতের নির্দেশ অনুসারে কাজ করেছে। কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে গুরুতর অপরাধগুলির ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থাকে তদন্ত করানোর নির্দেশ দিলে আমরা প্রস্তুত। আদালত চাইলে এনআইএ, সিবিআই-কে দিয়ে তদন্ত করাতে পারে।’
উল্লেখ্য, ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনা নিয়ে আদালতে রিপোর্ট পেশ করেছিল জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। রিপোর্টে রাজ্য সরকারের তীব্র সমালোচনা করে বলা হয়েছিল, "পশ্চিমবঙ্গে আইনের শাসন বলে কিছু নেই। আছে শাসকের আইন।" পাশাপাশি ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনায় সিবিআই তদন্তের সুপারিশও করেছে কমিশন। এক কথায় বিস্ফোরক এই রিপোর্টে ছত্রে ছত্রে রাজ্য সরকারের সমালোচনা করা হয়েছে। কিছুদিন আগে কলকাতা হাইকোর্টে এই রিপোর্ট জমা দেয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত কমিটি। ভোট পরবর্তী অশান্তির প্রেক্ষিতে জেলায় জেলায় গিয়ে কমিটির সদস্যদের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তা নথিবদ্ধ করা হয়েছে নথিতে। এতে দাবি করা হয়ে, এত হিংসাত্মক ঘটনার পরও ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি রাজ্য সরকারের চরম উদাসীনতা প্রতিফলিত হয়েছে। রিপোর্টে সরাসরি উল্লেখ করা হয়েছে প্রধান বিরোধী দলের সমর্থকদের ওপর প্রতিশোধমূলক হিংসা চালিয়েছে শাসকদল।
এদিন এই মামলায় সওয়াল-জবাব শেষ হয়েছে। এরপরও কারুর কোনও বক্তব্য থাকলে তা আগামীকালের মধ্যে লিখিতভাবে জমা দেওয়া যাবে। এরপর খুব তাড়াতাড়ি এই মামলায় হাইকোর্ট নির্দেশ জানাতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।