বিটন চক্রবর্তী, পূর্ব মেদিনীপুর: আজ ভারতের ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবস। ভারতকে স্বাধীন করতে যে সমস্ত বিপ্লবীরা প্রাণত্যাগ করেছেন বা যাঁদের নানাভাবে সাহায্য করেছেন, তাঁদের স্মরণ করেই এই বিশেষ দিনটি উদযাপন করি আমরা। স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসের যেমন বহু নাম জানা গেছে, তেমনই ইতিহাসের আলোয় কখনও আসেনি এমনও একাধিক নাম আছে। তেমনই মহিষাদলের দুই বিপ্লব গুণধর হাজরা ও নীলমণি হাজরা।
প্রায় ২০০ বছরের ব্রিটিশ পরাধীনতার শিকল ভাঙতে ভারতের বুকে একের পর এক আন্দোলন গড়ে ওঠে গাঁধিজির নেতৃত্বে। 'আইন অমান্য' ও 'অসহযোগ আন্দোলন'-এর রেশ ধরেই ১৯৪২ সালের 'ভারত ছাড়ো' আন্দোলনের ঢেউ দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। সেই সময়ে পরাধীন ভারতে তিন জায়গায় স্বাধীন সরকার গঠিত হয়। মহারাষ্ট্রের সাতারা, উত্তরপ্রদেশের বালিয়া ও বাংলায় তাম্রলিপ্ত মহাভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার।
বলাই বাহুল্য ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে অবিভক্ত মেদিনীপুরের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। সতীশ চন্দ্র সামন্ত, সুশীল ধাড়ার নেতৃত্বে ৪২-এর আন্দোলনে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে তমলুক। বুক চিতিয়ে লড়াই করেন মেদিনীপুরের বীর সন্তানেরা। মেদিনীপুরের 'ব্রিটিশ তাড়াও' আন্দোলনের বীজ অনেক আগেই রোপণ হয় মহিষাদলের রাজারামপুরের গুণধর হাজরার হাত ধরে। ১৯২০ সালে 'অসহযোগ আন্দোলন'-এ সক্রিয় ভূমিকা নেন গুণধর হাজরা। মহিষাদলের রথতলায় তাঁর নেতৃত্বে সাধারণ মানুষ বিদেশী জিনিসপত্র বর্জন করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ছেলের অন্নপ্রাশনের দিন ব্রিটিশ পুলিশ গ্রেফতার করে গুণধর হাজরাকে। এরপর তিনি মেদিনীপুরের সেন্ট্রাল জেলে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। অবিভক্ত মেদিনীপুরের তিনিই ছিলেন 'অসহযোগ আন্দোলন'-এর প্রথম শহীদ।
গুণধর হাজরার বংশধর হলেন নীলমণি হাজরা। তিনিও ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি ছিলেন দক্ষ সংগঠক। মহিষাদলের কংগ্রেস সংগঠন আরও মজবুত হয় তাঁর উপস্থিতিতে। 'ভারত ছাড়ো আন্দোলন'-এর প্রথম সৈনিক যদি সুশীল ধাড়া হন তবে, তালিকায় দ্বিতীয় নামটাই হচ্ছে নীলমণি হাজরার।
কিন্তু স্বাধীনতা দিবসের ৭৫ তম বর্ষে এসেও গুণধর হাজরা, নীলমণি হাজরার পরিবারের সদস্য থেকে আত্মীয়দের আক্ষেপের শেষ নেই। এই দুই মহান বিপ্লবীর কথা মানুষ তেমন জানেনই না। ফলে তাঁদের যতটা সম্মান প্রাপ্য তাঁরা তা পাননা।
গুণধর হাজরা ও নীলমণি হাজরার নামে মহিষাদলের তাজপুরে একটি বিশ্রামাগার রয়েছে। আগে ১৫ অগাস্ট এই দুই বিপ্লবীর জন্মস্থান রাজারামপুরে ধুমধাম করে পালিত হত। কিন্তু বর্তমানে সেইটুকুও আর করা হয় না। কথায় আক্ষেপের সুর নীলমণি হাজরাকে নিয়ে লেখা বই "নীলমণি হাজরার ডায়েরি"র লেখক হরিপদ মাইতির।
কী বলছেন স্থানীয় বিধায়ক তিলক চক্রবর্তী? তাঁর কথায়, সমস্ত স্বাধীনতা সংগ্রামীর পরিবারের সদস্যদের জন্য যতটা সম্ভব সাহায্য করা হচ্ছে। গুণধর হাজরা ও নীলমণি হাজরার পরিবারের সদস্যরা যদি কোনও কিছুতে অপমান বোধ করেন তবে নিশ্চয়ই তা খতিয়ে দেখে সমস্যার সমধান করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
স্বাধীনতার ৭৫ বছরে এসেও মহান বিপ্লবী চিত্তরঞ্জন সামন্তর গলায় আক্ষেপের সুর, 'এই স্বাধীনতা আমরা চাইনি। আমরা চেয়েছিলাম অহিংস সমাজ গড়ে উঠুক, কিন্তু এখন কেবল হিংসা ও বিদ্বেষ।'