কলকাতা: বর্ষা আছে। বৃষ্টি আছে। খিচুড়িও আছে। কিন্তু, ইলিশ নেই। কেমন লাগবে?


কিংবা ধরুন, জামাই ষষ্ঠী। কিন্তু, মেনুতে ভাপা ইলিশ নেই। কেমন হবে?

শুধু খাস বাঙাল নয়, এমন প্রশ্ন শুনে বহু ঘটিও বলবেন, এ আবার কেমন প্রশ্ন? এটা কখনও হয় নাকি? তাহলে শুনুন, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’টি গবেষণা বলছে, আজ না হোক, কয়েক বছর পরে ইলিশবিলাসীদের জন্য এমন দুর্দিন আসতেই পারে! আর মারাত্মক বিষয় হল, বাঙালের গর্ব ইলিশের এই অবলুপ্তির জন্য দায়ী থাকবে তার চির প্রতিদ্বন্দ্বী ঘটির পছন্দ চিংড়ি! অর্থাৎ, ঘটি-বাঙাল, মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের সেই চির পরিচিত দ্বন্দ্ব এবার মাঠ ছেড়ে সোজা জলে!

কিন্তু, এইটুকু চিংড়ি তার প্রতিদ্বন্দ্বী ইলিশকে একেবারে অবলুপ্তির পথে ঠেলে দিচ্ছে কীভাবে? কী বলছেন গবেষকরা? ইলিশ নোনা জল অর্থাৎ সমুদ্রের মাছ। কিন্তু, ডিম দিতে তারা আসে নদীর মিষ্টি জলে। বছরে দু’বার। বর্ষাকালে এবং শীতকালে। নদীতে ডিম দিয়ে আবার ফিরে যায় সমুদ্রে।

গবেষকদের মতে, ইলিশের ডিমের সামনে মৃত্যুদূত হয়ে দাঁড়াচ্ছে নদীর মোহানায় পাতা সারি সারি বেহুন্দি এবং মশারি জাল। যা দিয়ে বাগদা চিংড়ির পোনা ধরার কাজ চলছে।

গবেষকদের দাবি, ইলিশ খুব সুখী মাছ। চিংড়ি ধরার এই মশারি বা বেহুন্দি জালে ধাক্কা খেলেই ইলিশের ডিম নষ্ট হয়ে যায়।

গবেষকদের চাঞ্চল্যকর দাবি, শুধু একটি চিংড়ির পোনা ধরতে ৩৭০ থেকে ৩৮০টি মাছ নষ্ট হয়। এর মধ্যে ৫০ থেকে ৬০টি ইলিশ মাছ থাকার সম্ভাবনা।

ভাবুন, একটি বাগদা চিংড়ির পোনা ধরতে গিয়ে ৫০-৬০টি ইলিশ ডিমেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে! তাহলে চিংড়ি ধরার সারি সারি এই জালে ধাক্কা খেয়ে কত ইলিশ নষ্ট হতে পারে! গবেষকদের দাবি, এরকম চললে কয়েক বছর পর ইলিশ অবলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।

গবেষকদের এই আশঙ্কা যে একেবারে অমূলক নয়, তা বোঝা যায়। বাজারে পা রাখলেও। মাছ ব্যবসায়ীরা বলছেন, রুপোলি শস্যের জোগানে গত কয়েকবছর ধরে কার্যত খরা চলছে।

ইলিশের অভাব ভাবাচ্ছে ক্রেতাদেরও। তাঁরা বলছেন, আগে ইলিশ বলতে বুঝতাম এক কেজি, দেড় কেজির। এখন সেরকম ইলিশের জোগান কোথায়?

ইলিশবিলাসীরা এখন ভেবে পাচ্ছেন না, যদি চিংড়ি ধরতে গিয়ে ইলিশ এভাবে ডিমেই নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে বর্ষার রোম্যান্টিসিজম আর কিছু অবশিষ্ট থাকবে কি? তার ওপর আবার কাটা ঘায়ে নুনের ছিটের মতো সেই ইলিশ নিধনের নেপথ্যে যখন চির প্রতিদ্বন্দ্বী চিংড়ি!