সৌরভ বন্দ্যোপাধ্যায়, উত্তরপাড়া: কখনও সিবিআইয়ের কৌঁসুলি, কখনও কেন্দ্রীয় সরকারের বিশেষ কৌঁসুলি বা কখনও মুখ্যমন্ত্রীর অফিসের উপদেষ্টা --  প্রতারণার জাল ছড়াতে ধৃত সনাতন রায়চৌধুরী এরকম একাধিক ভুয়ো পরিচয় দিতেন বলে ইতিমধ্যেই অভিযোগ উঠেছে।


এবার তাঁর বিরুদ্ধে ভুয়ো মানবাধিকার সংগঠন চালানোরও অভিযোগ উঠল। সেই সঙ্গে সামনে এসেছে বাংলাদেশ-যোগের বিষয়ও। 


হুগলির উত্তরপাড়ার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক এবং সমাজকর্মী সাক্ষী ঘোষ হাজরা। একসময় ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অফ হিউম্যান অ্যান্ড ফান্ডামেন্টাল রাইটস নামে একটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।


তাঁর দাবি, ওই সংগঠনের সম্পাদক ছিলেন সনাতন রায়চৌধুরী। ওই সংগঠন ‘ঐকতান’ নামে একটি পত্রিকা চালাত।  তার পাতায় পাতায় বেরতো সনাতনের ছবি। ছবির নীচে পরিচয় হিসেবে লেখা থাকত প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক।


অভিযোগকারী প্রাক্তন স্কুল শিক্ষক বলেন, আমাকে উত্তরপাড়ার এক ছাত্র এসে বলেন, স্যার আপনি মানবাধিকার কমিশনের হয়ে কাজ করবেন? আমি রাজি হই। ওই ছাত্রের নাম বিশ্বজিৎ সাঁতরা। তিনি সনাতনের সহকারী। 


অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের দাবি, ভুয়ো ভ্যাকসিনকাণ্ড সামনে আসতেই ওই সংগঠনের সদস্যপদ প্রত্যাহার করে নেন। অভিযোগ, বাংলাদেশেও প্রতারণার ফাঁদ পেতেছিলেন সনাতন। 


সাক্ষী ঘোষ হাজরা বলেন, সাধারণ সদস্য ১০০০ টাকা, এগজিকিউটিভ 5০ হাজার, এমনকী, ৬০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত মেম্বারশিপ ফি ছিল। 


অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের দাবি, বাংলাদেশেও ফাঁদ পেতেছিল সনাতন। সংগ্রাম মিত্র বাংলাদেশেও জাল বিস্তার করেছিলেন। তাঁর প্রশ্ন, এরা কীভাবে রাজ্যপাল-নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে? প্রভাবশালীদের সঙ্গে ছবি তোলে? 


এদিকে, সনাতনকাণ্ডে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য পুলিশের হাতে। সূত্রের খবর, নিজেকে ভারত সরকারের বিশেষ কৌঁসুলি বলে দাবি করতেন ওই আইনজীবী। উদ্ধার হয়েছে একাধিক নথি। 


এনিয়ে আইন মন্ত্রককে চিঠি দিচ্ছে কলকাতা পুলিশ। কাদের সঙ্গে সনাতনের যোগাযোগ ছিল, কীভাবে তিনি এধরনের ভুয়ো পরিচয় ব্যবহার করতেন, তা জানতে চান তদন্তকারীরা। 


পুলিশ সূত্রে খবর, সনাতনের দুটো ইমেল আইডি থেকেও প্রচুর তথ্য উদ্ধার হয়েছে। দেখা গেছে, কেন্দ্র ও রাজ্যের একাধিক সরকারি এজেন্সির সঙ্গে মেলের মাধ্যমে যোগাযোগ রেখেছিলেন সনাতন। সেইসব তথ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। আদালতেও এইসব তথ্য জমা দেওয়া হয়েছে।  


এর পাশাপাশি, সনাতনকাণ্ডে তথ্য জানতে চেয়ে এবার বিজেপিকে চিঠি পাঠাচ্ছে কলকাতা পুলিশ। সনাতনের কাছ থেকে আগেই উদ্ধার হয়েছে বিজেপির প্রাথমিক সদস্যপদ আবেদনের একটি রসিদ। 


পুলিশ সূত্রে খবর, তদন্তকারীরা জানতে চান, কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে সনাতনের যোগাযোগ ছিল। এছাড়াও, সনাতনের বিপুল আয়ের উত্স জানতে সব দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করছে পুলিশ। 


পুলিশের দাবি, সিবিআই ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, সনাতন তাঁদের কৌঁসুলী নন। পুলিশ সূত্রে খবর, খতিয়ে দেখা হচ্ছে, সনাতনের ভুয়ো পরিচয় দেওয়ার উদ্দেশ্য কী ছিল, আর কোথায় তিনি প্রতারণার জাল ফেঁদেছিলেন। 


যত দিন যাচ্ছে, ততই সনাতনের বিরুদ্ধে নতুন নতুন অভিযোগ উঠছে। আর কোথায় কোথায় কীর্তিমান এই ব্যক্তি প্রতারণার জাল বিস্তার করেছেন, সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন।


যত দিন যাচ্ছে, ততই সনাতনের বিরুদ্ধে নতুন নতুন অভিযোগ উঠছে। আর কোথায় কোথায় কীর্তিমান এই ব্যক্তি প্রতারণার জাল বিস্তার করেছেন, সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন।