উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়, সুনীত হালদার, উদয়নারায়ণপুর: ডিভিসির ছাড়া জলে ভাসছে উদয়নারায়ণপুরের ৮৫টি গ্রাম। জলে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হল এক শিশুর। চরম দুর্ভোগে মানুষ। জল পেরিয়েই চলছে ঝুঁকির পারাপার। জলমগ্ন ত্রাণশিবিরও।


দুই মাসে জোড়া প্লাবনের ধাক্কা। দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন (ডিভিসি)-র ছাড়া জলে ভাসছে হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর।


শনিবার জল ঢুকে নতুন করে প্লাবিত হয় আমতা দু-নম্বর ব্লকের একাংশ। এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেন। এরপর নবান্নে পর্যালোচনা বৈঠকের তিনি জানান, হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর, আমতা, বাগনান, আরামবাগ, খানাকুল, বাঁকুড়া সদর, বডজোড়া, সোনামুখী...ঘাটাল, দাসপুর, ডেবরা, পিংলা...পটাশপুর ভগবানপুর, নানুর, আউশগ্রাম, কেতুগ্রাম,  কাঁকসার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত। প্রায় ৫ লক্ষ মানুষকে সরানো হয়েছে।


প্রশাসন সূত্রে দাবি করা হচ্ছে, ডিভিসির ছাড়া জলে ভেসে গেছে উদয়নারায়ণপুরের অন্তত ৮৫টি গ্রাম। তারই মধ্যে ফের ঘটে গেছে প্রাণহানি। শিবপুর দক্ষিণ পাড়ায়, জলে তলিয়ে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে এক শিশুর।


বানভাসি এলাকা যেন সমুদ্র। ডুবেছে বিঘার পর বিঘা চাষের জমি। হারিয়ে গেছে রাস্তা। তাই ভরসা বলতে নৌকা। কিন্তু সেটা কপালে না জুটলে, জল পেরিয়েই চলছে জীবনযুদ্ধ।


পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ, যে নদী আর ব্রিজের ফারাক করা মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। চার দিকে জল। তার মধ্যেই মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে ঘরবাড়ি।


উদয়নারায়ণপুরের বরদায় ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন ৩০০ জন। কিন্তু সেখানে পৌঁছতে হচ্ছে এক বুক জল পেরিয়ে। পুজোর মুখে বন্যা। ম্লান হতে বসেছে পুজোর আনন্দ। ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নেওয়া এক শিশু আধো গলায় বলল, বাবা জামা দেবে বলেছিল, কিন্তু দেয়নি, ঠাকুর দেখতে যাব না।


বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা নিয়ে এদিন বৈঠকে বসেছিলেন মন্ত্রী, জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, বিডিওরা।


জনস্বাস্থ্য কারিগরিমন্ত্রী পুলক রায় বলেছেন, এটা হচ্ছে কৃষি নির্ভর এলাকা, ফলে মানুষের খুবই খারাপ অবস্থা। সব ভেসে গেল। আর কিছু রইল না।


গত অগাস্টের শুরুতেই প্লাবিত হয়েছিল উদয়নারায়ণপুর। সেই ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতে, ফের ধেয়ে এসেছে জল। এই বিপর্যয় থেকে রেহাই মিলবে কবে? অপেক্ষায় হাজার হাজার অসহায় মানুষ।