কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা ও নদিয়া: শুরু হল উচ্চমাধ্যমিক। সংসদ জানিয়েছে, প্রথম দিনের পরীক্ষা শেষ হয়েছে নির্বিঘ্নে। এবারের পরীক্ষায় নজর কাড়ল দুই ইচ্ছাশক্তির নজির।
একদিকে, উত্তর ২৪ পরগনার স্কুলে বিছানায় বসে পরীক্ষা দিল বিরল রোগে আক্রান্ত এক ছাত্রী। অন্যদিকে, নদিয়ার স্কুলে একসঙ্গে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বাবা-মা-ছেলে।
জন্ম থেকেই চলাফেরা করতে পারে না সমাদৃতা চক্রবর্তী। কিন্তু বিরল রোগ তাঁর ইচ্ছাশক্তিকে দমাতে পারেনি। একাদশে স্কুলে সবার মধ্যে দ্বিতীয়। উচ্চমাধ্যমিক শুরুর দিন স্কুলের মধ্যেই বিছানায় বসে পরীক্ষা দিল উত্তর ২৪ পরগনার নবজীবন বিদ্যামন্দিরের ছাত্রী।
নিজের স্কুলে পরীক্ষা দেওয়া যায় না। সমাদৃতার ইচ্ছাশক্তিকে মর্যাদা দিতে নিয়মকে বাঁকাতে হয়েছে। এদিন উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ সভাপতি মহুয়া দাস বলেন, সিএমের দফতর থেকে চিঠি এসেছিল। গুরুত্ব দিয়ে যেন দেখি।
বন দফতরের অবসরপ্রাপ্ত চাকুরের একমাত্র সন্তান সমাদৃতা। মেয়ের জেদ দেখে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন বাবা-মা। কিশোরীর বাবা সজল চক্রবর্তী বলেন, ও ৫০০ গ্রাম ওজন তুলতে পারে না। বড় হরফ লিখতে পারে না। চিবিয়ে খেতে পারে না। তাও আমরা স্বপ্ন দেখছি।
অন্য নজির নদিয়ায়। সেখানে একসঙ্গে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বাবা-মা ও ছেলে। ক্লাস নাইনের পর পড়াশোনায় ছেদ পড়ে দিনমজুর বলরাম মণ্ডলের। স্ত্রী কল্যাণীরও অল্প বয়সে বিয়ে।
অভাবী সংসারে পড়াশোনা করার আর সাধ্য কী! কিন্তু তাঁদের ছেলে বিপ্লবই জীবনে এনে দিল বিপ্লব। নিজে টিউশন পড়ে পড়াতে লাগল বাবা-মাকে। যার ফল, ধানতলার বহির্গাছি হাইস্কুলের পরীক্ষাকেন্দ্রে একসঙ্গে পরীক্ষার্থী বাবা-মা-ছেলে।
বেনজির নজরদারিতে বুধবার থেকে শুরু হয়েছে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। পরীক্ষার্থী প্রায় ৮ লক্ষ।এবার ছাত্রদের থেকে ছাত্রীদের সংখ্যা বেশি। পরীক্ষা হচ্ছে মোট ৫১ টি বিষয়ে। পরীক্ষাকেন্দ্রের সংখ্যা ৬৬১।
হিন্দি, উর্দু, নেপালি ভাষাভাষী পরীক্ষার্থীদের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে অনুবাদকের। উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ সূত্রে খবর, রাজ্যের প্রায় ৭৫টি পরীক্ষাকেন্দ্রকে স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যার মধ্যে সব চেয়ে বেশি পরীক্ষাকেন্দ্র মালদায়।
পরীক্ষায় নকল রুখতে স্পর্শকাতর পরীক্ষাকেন্দ্রগুলিতে বসেছে সিসিটিভি, পরীক্ষা চলাকালীন করা হবে ভিডিওগ্রাফি। প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে ক্লাসে যাওয়ার সময়ও প্রশ্নপত্র থাকবে খামবন্দি।
সংসদের দাবি, পরীক্ষার আগে যাতে প্রশ্নপত্র বাইরে না আসে তার জন্যই এই ব্যবস্থা। যদি বেরোয়, ট্র্যাকিং সিস্টেমের মাধ্যমে সনাক্ত করা যাবে কোথা থেকে বেরিয়েছে।
এদিন শহরের একটি পরীক্ষাকেন্দ্রে উত্তরপত্র রেখে লেখার জন্য বোর্ড ব্যবহার করতে না দেওয়ায় অসন্তোষ ছড়ায় অভিভাবকদের মধ্যে।