মালদা, উত্তরদিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর:  মানুষের সঙ্গে মিশে গিয়ে, মানুষের দুর্গতি জানা। জলে দাঁড়িয়ে জল-যন্ত্রণা শোনা, সেইসঙ্গে বন্যা প্লাবিত এলাকায় দাঁড়িয়ে কেন্দ্রকে আক্রমণ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।


মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, কেন্দ্র গুজরাত-অসমকে প্যাকেজ দিয়েছে। আপত্তি নেই। সব রাজ্য পাক। বাংলায় অসম ও গুজরাতের থেকে কম বন্যা হয়নি। রিপোর্ট তৈরি হচ্ছে। কেন্দ্রকে পাঠানো হবে। আমাদের ন্যায্য পাওনা চাই। বঞ্চনা নয়, নায্য দাবি চাই। মালদা ও দুই দিনাজপুরের বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার পর স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। উত্তরবঙ্গের বন্যা নিয়ে আঙুল তুললেন প্রতিবেশী রাজ্য বিহারের দিকেও।


মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পূর্ণিয়ায় বাঁধ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ডিএম রিপোর্ট করেছে। আমরা অভিযোগ করেছি। বিহার ডুবলে বাংলাকে ডুবতে হয়। বন্যা প্রতিরোধে কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ফরাক্কা, দুর্গাপুর, ডিভিসি-তে ড্রেজিং হয়নি। কেন্দ্রকে ড্রেজিং করাতে হবে।


সোমবার মালদার গৌরভবনে মালদা, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠকের পর তাঁর নির্দেশ, পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা করতে হবে।


বন্যার জল নামার পর যুদ্ধকালীন তত্পরতায় পুনর্গঠন ও পুনর্বাসনের কাজ শুরু করতে হবে। বন্যার সুযোগ নিয়ে কালোবাজারি রুখতে পুলিশকে কড়া নজরদারি চালাতে হবে।


আজ মালদা, উত্তর দিনাজপুর ও দক্ষিণ দিনাজপুরের বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী। জলে নেমে দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলে, তাঁদের অভাব-অভিযোগও শোনেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।


সোমবার দুপুর তখন সোয়া একটা। মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় পৌঁছয় উত্তর দিনাজপুরের ইটাহারে। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে কুচিয়ামাড়ি গ্রাম যেন নদী। ডিভাইডারের ঝুপড়িতে কোনও রকমে জীবনযাপন। গাড়ি থেকে নেমে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। কোলে তুলে নেন আড়াই বছরের রূপসীকে। গ্রামবাসীদের মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, কোনও অসুবধা হচ্ছে না তো? খাবার দাবার পাচ্ছ তো?


মালদার কাছে নারায়ণপুর গ্রামের মানুষদের জল-যন্ত্রণা চরমে। মুখ্যমন্ত্রী শুনলেন। জলে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী। ভেলায় করে আসছে মানুষ। এদিন একে একে গাজল, চাঁচল, আওড়া, জাগডোলা, কালীনগর, মশালডিহি সহ মালদার বিভিন্ন প্লাবিত এলাকা ঘুরে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী।


৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর কোথাও কোথাও এখনও জল। সেই জলপথেই এগিয়ে চলে ভিভিআইপি- কনভয়। মালদা থেকে উত্তর দিনাজপুরের ইটাহার, দক্ষিণ দিনাজপুরের বুনিয়াদপুর-- মাঝেমধ্যেই দাঁড়িয়ে পড়ে মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়।


কোথাও খিচুড়ি বিলি, কোথাও ডিম-ভাত। আপাতত পেট ভরানো হোক, জল নামলেই যেন শুরু হয় ঘর-বাড়ি রাস্তাঘাট মেরামতির কাজ। নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর।