রাজীব চৌধুরি, বহরমপুর: রাজ্যে শুরু হয়ে গেছে বিধানসভা নির্বাচনের দিনগোনা। কিন্তু নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে ততই প্রকাশ্যে আসছে শাসকদলের অন্তর্দ্বন্দ্ব। ফের প্রকাশ্যে এল মুর্শিদাবাদের তৃণমূল সভাপতির সঙ্গে জেলা পরিষদের সভাধিপতির বাগযুদ্ধ।


মুর্শিদাবাদের তৃণমূল সভাপতি আবু তাহেরের অভিযোগ, দলে থেকেও সরকারি ও দলীয় অনুষ্ঠানে গরহাজির থাকছেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি মোশারফ হোসেন। এলাকায় শুভেন্দু অনুগামী বলে পরিচিত মোশারফ দলীয় নির্দেশ সত্ত্বেও নিজের ফ্যান ক্লাবে রাখা শুভেন্দু অধিকারীর ছবি ও হোর্ডিং পোস্টার সরাননি। এ বিষয়ে মুর্শিদাবাদের তৃণমূল সাংসদ ও জেলা সভাপতি আবু তাহের জানিয়েছেন, ‘সভাধিপতি শীর্ষ নেতৃত্বকে এক কথা বলছেন আর এখানে আর একরকম কাজ করছেন। সভাধিপতি সরকার ও দলের অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকছেন এবং দেখা যাচ্ছে তাঁর একটা আলাদা ফ্যান ক্লাব তৈরি করে তাতে অংশগ্রহণ করছেন। উনি কথা দিয়েছিলেন নিজের ফ্যান ক্লাবে রাখা শুভেন্দুর সব কাট আউট খুলে ফেলা হবে। কিন্তু সেই ছবি খোলেননি। সভাধিপতির ভূমিকা এবং কয়েকজন জেলা পরিষদ সদস্যের ভূমিকায় দলের ক্ষতি হচ্ছে।’

যদিও এইসব অভিযোগকে পাত্তা দিতে নারাজ তৃণমূল পরিচালিত জেলা পরিষদের সভাধিপতি। মুর্শিদাবাদ তৃণমূল নেতা ও সভাধিপতি মোশারফ হোসেনের বক্তব্য, ‘আমি কারও ব্যক্তিগত  কথায় চলি না, একটা পঞ্চায়েত অ্যাক্ট বা সিস্টেমের মধ্যে দিয়ে চলি। এই মুহূর্তে আমাদের একমাত্র পাখির চোখ উন্নয়ন।  আমি মুর্শিদাবাদের ৭২ লক্ষ মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করছি। তাতে কে কী বলছে আমার কিছু যায় আসে না।’

শাসকদলের এইসব অন্তর্দ্বন্দ্বের ফল ভুগতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে, থেমে থাকছে উন্নয়ন, তৃণমূলকে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। মুর্শিদাবাদ দক্ষিণের বিজেপি সাংগঠনিক সভাপতি গৌরীশঙ্কর ঘোষ বলছেন, ‘তৃণমূল কংগ্রেসের এই জেলার সভাপতি ও সাংসদ আবু তাহের খান নিজেই আজক তাঁদের সভাধিপতির বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন। অর্থাৎ তাঁদের  দলের মধ্যে সমন্বয় নেই। তাঁদের দলের লোকেরাই যখন সভাধিপতির উপর আস্থা রাখতে পারছেন না, তখন এলাকার মানুষ কীভাবে তাঁদের উপর আস্থা রাখবেন? এসবের ফলে উন্নয়নের সুফল থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে মানুষ।’

২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রমাণ করে দিয়েছে মুর্শিদাবাদে শক্ত জমি তৃণমূলের। নির্বাচনের বিধানসভাওয়াড়ি ফলাফলে ২২টি বিধানসভা আসনের মধ্যে তৃণমূল এগিয়ে ১৬টি আসনে বিজেপি এগিয়ে মাত্র ১টি আসনে। কংগ্রেস এগিয়ে ৫ আসনে। আগামী নির্বাচনে শাসক দলের অন্তর্দ্বন্দ্বকে হাতিয়ার করে কিছুটা হলেও বিজেপি নিজেদের জমি শক্ত করতে পারে কি না, এখন সেটাই দেখার।