রাজা চট্টোপাধ্যায়, জলপাইগুড়ি: মিলছে না বরাদ্দ রেশন, চা-সুন্দরীও সুবিধা থেকেও তাঁরা বঞ্চিত। এমনই অভিযোগ তুলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিলেন জলপাইগুড়ির আটটি চা-বাগনের শ্রমিকরা। শ্রমিক স্বার্থে চালু এই সমস্ত সুযোগ সুবিধে মিলছে না অভিযোগে এবার আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিলেন জলপাইগুড়ির ভান্ডারপুর, জয়পুর, শিকারপুর, সরস্বতীপুর, নাগপুর, রায়পুর, ডেঙ্গুয়াঝার, করলাভ্যালি চা-বাগানের শ্রমিকরা। শনিবার সকালে করলাভ্যালি চা-বাগানে জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের পাতকাটা গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের নেতৃত্ব এ নিয়ে বৈঠকও হয়।


শ্রমিকদের অভিযোগ, তালিকায় নাম না-থাকায় তাঁরা চা-সুন্দরীর প্রকল্প থেকে বঞ্চিত। রেশনের ৩৫ কেজি চাল পাচ্ছেন না কয়েক মাস ধরে।আগামীতে এই সুবিধা চা বাগানের শ্রমিকরা না পেলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধান। সেই আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করতেই এই গেট মিটিং শুরু করলেন চা বাগানের শ্রমিকেরা। পাশাপাশি গত ১৮ জুলাই বন্ধ রায়পুর চা বাগানে কম রেশন আসায় রেশনের গাড়ি কয়েক ঘন্টা আটকে রেখে ফিরিয়ে দেওয়া হয় সেই রেশনের গাড়ি। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সেখানে সম্পূর্ণ রেশনের ব্যবস্থা করা হয় বলে জানা গিয়েছে। কিন্ত এখনও প্রায় আটটি বাগানে শ্রমিকেরা সম্পূর্ণ রেশন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে অভিযোগ শ্রমিকমহলে।


তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান, প্রধান হেমব্রম বলেন, 'আজ এখানে আটটা চা বাগানের শ্রমিকেরা রয়েছেন। ভান্ডারপুর, জয়পুর, শিকারপুর, সরস্বতীপুর, নাগপুর, জয়পুর, রায়পুর, ডেঙ্গুয়াঝার, এই বাগান গুলোতে আমরা রেশন থেকে বঞ্চিত রয়েছি। ৮৪টা চা বাগানের মধ্যে এই আটটি চা বাগানের শ্রমিকেরা ৩৫ কেজি চাল পাচ্ছে না। আমরা কী অন্যায় করেছি? যে চা সুন্দরী প্রকল্প থেকেও বঞ্চিত। এই আটটি চা বাগানের শ্রমিকদের নাম নেই চা সুন্দরী প্রকল্পে। আমরা এলাকায় বিপুল ভোটে লিড দিয়ে আসছি। আমাদের বিধায়ক আছেন, সভাধিপতি আছেন। এনারা কোনও সময় বলছেন না এই সমস্যা গুলো মিটিয়ে দেবো। তাই সবাইকে নিয়ে আমরা আন্দোলন করতে বাধ্য হচ্ছি। প্রথমে আমরা জেলাশাসক, খাদ্য দফতরে চিঠি পাঠাবো। তারপর মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখবো যাতে আমরা বাকিদের মতো সমস্ত সুবিধেগুলো পাই।'


পাশাপাশি তিনি এমনও বলেন যে, 'যদি আমরা বাকিদের মতো চা সুন্দরী প্রকল্পের সমস্ত সুবিধা না পাই, তাহলে আমাদের রাস্তায় নামতে হবে। তাই সব বাগানে গেট মিটিং করে শ্রমিকদের একত্রিত করে লড়াইয়ে নামবো আমাদের অধিকার নিয়ে।' এরই সঙ্গে রায়পুর চা বাগানের শ্রমিক বিজয় বড়াইক বলেন, 'এই ভাবে যদি রেশন দেওয়া হয়, তাহলে সকলের খাবার বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা চাই সবাই সমান ভাগে রেশন পাক। না খেয়ে তো থাকতে পারবো না। তাহলে অন্য ব্যবস্থা নিতে হবে আমাদের। আমরা চাই বাগানে প্রশাসনের লোক এসে এটার সমাধান করুন যে কিভাবে আমরা থাকতে পারি। রেশন নিয়েও যদি দুর্নীতি হয়, তাহলে কি করে চলবে। আমরা  সম্পূর্ণ রেশন পাচ্ছি না। রেশনের ওপরেই আমাদের ভরসা করতে হয়।' এই বিষয়ে জেলাশাসককে ফোন করা হলে তিনি ফোন কেটে দেন বলে জানা গিয়েছে। 


খাদ্য দফতর সূত্রে বলা হচ্ছে যে, 'আমরা গোটা বিষয়টা জানতে চেয়েছি। কারা রেশন পাচ্ছে না তাঁদের লিস্টও চেয়ে পাঠানো হয়েছে। আমরা উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে জানিয়েছি যাতে সকলেই এই সুবিধাগুলো পান। তার ব্যবস্থাও দ্রুত করা হবে। তবে রায়পুর চা বাগানে এখন সম্পূর্ণ চাল দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে।'