পশ্চিম বর্ধমান: শুভেন্দু অধিকারীর তৃণমূল ছাড়ার কয়েক-ঘণ্টার মধ্যেই দল ছাড়লেন জিতেন্দ্র তিওয়ারি। তাও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের আগের দিনই!


এদিন প্রথমে আসানসোলের পুরপ্রশাসক পদ থেকে ইস্তফা দেন জিতেন্দ্র। তার এক-ঘণ্টার মধ্য়েই জেলা সভাপতি-সহ তৃণমূলের সব পদে ইস্তফা ঘোষণা করেন তিনি।


তাঁর দাবি, তিনি পুর প্রশাসক পদে ইস্তফা দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর পার্টি অফিসে হামলা হয়। বলেন, ‘পুর প্রশাসক পদে ইস্তফার পরেই পার্টি অফিসে হামলা।


এই ঘটনার জন্য নাম না করে ফিরহাদ হাকিমের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলেন জিতেন্দ্র। বলেন, ‘কলকাতার তৃণমূল নেতার নির্দেশেই পাণ্ডবেশ্বরে হামলা।’
তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ জিতেন্দ্র তিওয়ারি।


আগামীকাল মুখ্যমন্ত্রী মমতার সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল জিতেন্দ্রর। তার আগের দিনই আসানসোলের পুরপ্রশাসক পদ ও তৃণমূল থেকে ইস্তফা দিলেন তিনি। বললেন, ‘আসানসোলের উন্নয়নের স্বার্থে লড়তে হবে। পুরমন্ত্রীকে চিঠি পাঠানোর পর বিতর্ক তৈরি হয়। আসানসোলকে বঞ্চনা করেছে রাজ্য সরকার।


এদিন ফের ফিরহাদ হাকিমকে আক্রমণ করেন জিতেন্দ্র। বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীকে সম্মান করি, মুখ্যমন্ত্রীকে বিড়ম্বনায় ফেলছেন ফিরহাদ।’ যদিও, একইসঙ্গে জানিয়ে দেন, তিনি বিজেপিতে যাচ্ছেন না। বলেন, ‘বিজেপিকে পছন্দ করি না, যাচ্ছিও না। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক নিয়ে পরে সিদ্ধান্ত। মমতার পর শুভেন্দুই সবথেকে বড় নেতা। দলের উচিত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে শুভেন্দুকে তৃণমূলে রাখা।’


বেশ কিছুদিন ধরে কলকাতা পুরসভার প্রশাসকের সঙ্গে আসানসোলের প্রশাসকের বাগযুদ্ধ চরমে। থামতেই চাইছে না ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে জিতেন্দ্র তিওয়ারির স্মার্ট সিটি তরজা।


আর শুধু তাই নয়, শুভেন্দু অধিকারী যেদিন তৃণমূলের বিধায়কের পদ থেকে ইস্তফা দিলেন, সেদিনই সন্ধেতেই তাঁর সঙ্গে দেখা করলেন পশ্চিম বর্ধমানের জেলা তৃণমূল সভাপতি জিতেন্দ্র। আর সেইসঙ্গে শুভেন্দু অধিকারীর প্রশংসা করে ফের ফিরহাদ হাকিমকেও নিশানা করেন তিনি।


জিতেন্দ্র বলেন, ববি হাকিম শুভেন্দুর সমালোচনা করছেন। কিন্তু ববির থেকে শুভেন্দুর গুরুত্ব অনেক বেশি। লড়াই করে উঠে এসেছেন শুভেন্দু অধিকারি। ববির মুখে শুভেন্দুর সমালোচনা মানায় না। যদিও ফিরহাদের দাবি, আমার সঙ্গে ওর সম্পর্ক ভালই ছিল। এখন যদি খারাপ কথা বলে কী বলতে পারি? মেরেছো কলসির কানা, তাই বলে কি প্রেম দেব না?


গত সোমবার ফিরহাদ হাকিমকে লেখা জিতেন্দ্র তিওয়ারি একটি চিঠি প্রকাশ্যে চলে আসায় অস্বস্তিতে পড়ে তৃণমূল নেতৃত্ব। চিঠিতে জিতেন্দ্র অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক কারণে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পের টাকা ব্যবহার করতে দিচ্ছে না রাজ্য সরকার!


বুধবার শ্রমিক সংগঠনের সভায় ফের সেই চিঠি দেওয়ার প্রসঙ্গ তোলেন জিতেন্দ্র তিওয়ারি। বলেন, ববি বলছে আমি ওর ভাই। কিন্তু ভাই বললে তো ভাগ চাইবে। আমরা ভাগ দিতে চাই না। উন্নয়ন চাই। একটি চিঠি দিয়েছি। কী অন্যায় করেছি? কোনও সমস্যার কথা বললেই বিজেপি তকমা দেওয়া হচ্ছে। যেতে না চাইলেও ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।


মঙ্গলবার আসানসোলে তৃণমূল কংগ্রেস হিন্দি প্রকষ্ঠের একটি অনুষ্ঠানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূয়সী প্রশংসা করে জিতেন্দ্র। সেই সঙ্গে নাম না নিয়ে দলের একাংশকে নিশানা করতেও ছাড়েননি তিনি। এদিও তাঁর গলায় ছিল আক্রমণের সেই সুর। বলেন, কিন্তু দলে যাঁরা এক নম্বর, দু’নম্বর তাঁরাই দলটাকে শেষ করছে। মানুষের সঙ্গে ছিলাম। মানুষের সঙ্গে থাকব।