কলকাতা: বঙ্গ রাজনীতির ময়দানে পা রাখার আগেই জোর ধাক্কা খেল আসাদউদ্দিন ওয়েইসির মিম। রাজ্যে তাদের প্রধান সেনাপতিই দল ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিলেন শনিবার।


বিহারের সাম্প্রতিক বিধানসভা ভোটে ৫টি আসন জিতে পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন বিধানসভা ভোটে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে নিশানা করেছে মিম। ওয়েইসি প্রায়ই, এমনকী সম্প্রতি রাজ্য সফরে এসে গত রবিবারও মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রীকে আক্রমণ করে বাম, কংগ্রেসের সুরেই বলেছেন, মমতাই বিজেপিকে রাজ্যে হাত ধরে ডেকে নিয়ে এসেছেন, বিজেপির সাম্প্রতিক উত্থানের জন্য দায়ী তিনিই। পাল্টা মমতা তথা তৃণমূল বলছে, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে মুসলিম ভোট কেটে বিজেপির সুবিধা করে দিতেই প্রার্থী দিচ্ছেন ওয়েইসি।


এই প্রেক্ষাপটেই মিমের অস্থায়ী প্রধান এস কে আব্দুল কালাম নিজের সমর্থকদের নিয়ে শাসক দলে সামিল হয়েছেন। রাজ্য়ের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের উপস্থিতিতে তৃণমূল ভবনে কালাম জানান, বেশ কয়েক বছর ধরে রাজ্যে শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রয়েছে। তিনি বলেন, আমরা দেখেছি, পশ্চিমবঙ্গ শান্তির মরূদ্যান। কিন্তু সম্প্রতি রাজ্যের বাতাস বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। এটা বদলাতে হবে। সেজন্যই আমি তৃণমূলে যোগদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মিম অতীতেও রাজ্যে পা রাখার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু বর্তমান সময়ে ওদের রাজ্য়ে ঢোকা ঠিক হবে না। এতে অহেতুক ভোট কাটাকাটি হবে যা মোটেই কাঙ্খিত নয়। আমি বাঁকুড়া, মুর্শিদাবাদ, মালদা, কোচবিহার ঘুরেছি, সেখানকার লোকজন বলেছে, এই বিষাক্ত পরিবেশকে ঠেকাতে হবে।


এর আগে, নভেম্বরেও এ রাজ্যে মিমের গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলে পরিচিত আনোয়ার পাশা কয়েকজন অনুগামীকে নিয়ে তৃণমূলে যোগ দিয়ে বলেছিলেন, হায়দরাবাদের দলটা বিজেপিকে সাহায্য করতেই ভোট কাটার খেলায় নেমেছে।


গত রবিবার ওয়েইসি ঘোষণা করেন, তিনি প্রথম সারির মুসলিম নেতা ফুরফুরা শরিফের আব্বাস সিদ্দিকির সঙ্গে জোট করে বিধানসভা নির্বাচনে লড়বেন। তিনি সিদ্দিকির সঙ্গে প্রাথমিক বৈঠকও করেন। পরে ঘোষণা করেন, কোন কোন জেলায়, কটি আসনে লড়বেন তাঁরা, সেটা শীঘ্রই ঠিক হবে। ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা সিদ্দিকিও সম্প্রতি নানা ইস্যুতে মমতা সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন। ওয়েইসিও মমতাকে আক্রমণ করে বলেন, তিনি অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমলে কেন্দ্রে এনডিএ-র শরিক ছিলেন। তাছাড়া, গুজরাত যখন জ্বলছিল, তিনি কী করছিলেন? কেন তৃণমূল মন্ত্রী, বিধায়ক, সাংসদরা দল ছেড়ে বিজেপিতে যাচ্ছেন, সেই প্রশ্নও তোলেন।


সাম্প্রতিক হায়দরাবাদ পুরভোটেও প্রবল গেরুয়া ঝড়ে কেসিআরের টিআরএস ধাক্কা খেলেও ৪৪টি আসন দখলে রেখে নিজেদের গড় অক্ষত রেখেছে মিম। তৃণমূল সহ বেশ কিছু বিরোধী দল অবশ্য তাদের ‘ভোট-কাটুয়া, ‘বিজেপির বি-টিম’ বলেই দাবি করে। কিন্তু হায়দরাবাদের এমপির পাল্টা দাবি, বিজেপির উন্নততর বিকল্প হিসাবে তুলে ধরা আমার দলের মৌলিক কর্তব্য।


এপ্রিল-মে মাসে রাজ্য়ে বিধানসভা ভোটে ঠিক হবে, আগামী ৫ বছর নবান্নে কে শাসক হবে। বর্তমানে তৃণমূলের দখলে রয়েছে ২০০-র ওপর আসন। কিন্তু ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে ১৮টি আসনে জিতে তৃণমূলের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছে গেরুয়া দল।