কলকাতা: নারদ স্টিং অপারেশন সম্পর্কে জানতেন কে ডি সিংহ। তিনিই স্টিং অপারেশনের জন্য টাকা দেন। কে ডি সিংহের গ্রেফতারির পর ফের এই দাবি করলেন সাংবাদিক ম্যাথ্যু স্যামুয়েল। নারদকাণ্ডে অ্যালকেমিস্টের কর্ণধার কে ডি সিংহের ভূমিকা কী ছিল? তা জানতে চায় ইডি। ইতিমধ্যেই, সিবিআই ও কলকাতার নিজেদের দফতরের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে তারা। বিধানসভা ভোটের আগে তদন্ত তৎপেরতা তুঙ্গে। চারদিক থেকে সাঁড়াশি চাপ তৈরি করছে সিবিআই।
কয়লা পাচারকাণ্ডে অনুপ মাঝি ওরফে লালাকে হন্যে হয়ে খুঁজছেন গোয়েন্দারা। তাঁর সহযোগী গণেশ বাগাড়িয়াকে বারবার তলব করেও খোঁজ মেলেনি।গরু পাচারকাণ্ডে মূল অভিযুক্ত এনামুল হককে গ্রেফতার করেছে সিবিআই।যুব তৃণমূল নেতা বিনয় মিশ্র ও তাঁর ভাই বিকাশ মিশ্রকে খুঁজছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। চিটফাণ্ডকাণ্ডেও তৎপ র হয়েছে সিবিআই।
বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করা হয় অ্যালকেমিস্টের কর্ণধার প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ কে ডি সিংকে। শুক্রবার গ্রেফতার করা হয় রোজভ্যালি কর্ণধার গৌতম কুণ্ডুর স্ত্রী শুভ্রাকে। সারদা, রোজভ্যালি, গরুপাচার, কয়লার মতো নারদ কেলেঙ্কারির তদন্তেও ফের নজর পড়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থার। ইডির তদন্তকারীরা জানতে আগ্রহী, ২০১৬-র বিধানসভা ভোটের আগে তোলপাড় ফেলে দেওয়া নারদকাণ্ডে কী ভূমিকা ছিল এ রাজ্যের শাসকদলের প্রাক্তন সাংসদ কে ডি-র?
সূত্রের খবর, এ বিষয়ে নারদ মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই এবং কলকাতায় ইডির দফতরের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য চেয়ে চিঠি এসেছে ইডির সদর দফতর থেকে। চেয়ে পাঠানো হয়েছে সাংবাদিক ম্যাথ্যু স্যামুয়েলের বয়ানের কপি। ইতিমধ্যেই সেই তথ্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর। ম্যাথ্যু বলেছেন, উনিই তো টাকা দিয়েছিলেন, কলকাতায় যখন এসে ছিলাম, উনি জানতেন, এখানে এসেছেন, হোটেলে থাকতেন, উনি এখন সিবিআই-ইডির কাছে উল্টো কথা বলছেন, এটা ঠিক নয়, টাকা উনি দিয়েছিলেন।
২০১৬-র ১৪ মার্চ বিধানসভা ভোটের আগে নারদ স্টিংয়ের ফুটেজ প্রকাশ্যে আসে। যে ফুটেজে রাজ্যের শাসকদলের একাধিক নেতা-মন্ত্রী-সাংসদ ও পুলিশ অফিসারকে দেখা যায় টাকা নিতে। ফুটেজে যাঁদের দেখা গিয়েছিল, তাঁদের মধ্যে কয়েকজন ইতিমধ্যেই শিবির বদলে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন।


স্টিং অপারেশের প্রেক্ষিতে নারদ নিউজের তৎকালীন সিইও ম্যাথু স্যামুয়েল কলকাতা হাইকোর্টে হলফনামায় দাবি করেন, অ্যালকেমিস্ট গ্রুপের অধীনস্থ, তহলকার হয়ে তিনি ওই স্টিং অপারেশন করেছিলেন, এজন্য যখন যা টাকার দরকার হয়েছিল, তা দিয়েছিল অ্যালকেমিস্ট গ্রুপ। ম্যাথু যে অ্যালকেমিস্ট গ্রুপের কথা বলেছিলেন, তার মালিক কে ডি সিংহ! যিনি নিজে সেই সময় তৃণমূলের সাংসদ ছিলেন। আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ম্যাথু দাবি করেন, স্টিং অপারেশনের জন্য তাঁকে ৮০ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়। এই টাকার উৎস কী? সেটাই জানতে চায় ইডি।
বুধবার বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা মামলায় দিল্লিতে কে ডি-কে গ্রেফতার করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টেট। অভিযোগ, তাঁর মালিকানাধীন অ্যালকেমিস্টের একটি সংস্থা বিভিন্ন বেআইনি স্কিম দেখিয়ে বাজার থেকে প্রায় ১৯০০ কোটি টাকা তুলেছে। এর মধ্যে দেড়শো থেকে দু’শো কোটি টাকার হিসেব মেলেনি। এই টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে বলে গোয়েন্দাদের সন্দেহ। এছাড়া অ্যালকেমিস্টের আরও বিভিন্ন সংস্থা বাজার থেকে প্রচুর টাকা তুলেছে। ইডি সূত্রে দাবি, এই মোট পরিমাণ প্রায় দশ হাজার কোটি টাকা।এর আগে ২০১৯ সালে কে ডি সিংয়ের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা এবং ভারতীয় মূল্যে নগদ টাকা বাজেয়াপ্ত করেন গোয়েন্দারা। এবার তাদের নজরে নারদ-মামলার তথ্য।
সারদা কেলেঙ্কারির সিবিআই তদন্ত চলছে ৬ বছর ধরে। ৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে রোজভ্যালি কেলেঙ্কারির তদন্ত করছে সিবিআই। নারদ স্টিং অপারেশনের তদন্ত চলছে ৩ বছরের বেশি সময় ধরে। এর শেষ কবে? আদৌ কি রাঘববোয়ালরা ধরা পড়বে?