সৌভিক মজুমদার, কলকাতা: কালীপুজোর বাজি ফাটানো বন্ধের জন্য মামলা হাইকোর্টে। মামলাকারীর আবেদন, "ঊর্ধ্বমুখী করোনা সংক্রমণ, বন্ধ হোক বাজি পোড়ানো। অসুবিধা হতে পারে করোনা আক্রান্তদের। ২০২০ সালে নির্দেশ কার্যকর করুক হাইকোর্ট।'' এই মামলার শুনানি ২৯ অক্টোবর।
আবেদনে বলা হয়েছে, শব্দবাজি সহ সব ধরনের আতসবাজি যা দূষণ তৈরি করে তা বন্ধ করার জন্য অবিলম্বে নির্দেশ দিক কলকাতা হাইকোর্ট। পাশাপাশি বলা হয়েছে, গত বছর কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল কোনওরকম আতসবাজি পোড়ানো চলবে না। ক্রেতা এবং বিক্রেতা যাঁরা এই বাজি বিক্রি করবেন ও কিনবেন তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিতে পারবে পুলিশ। এই নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। মামলাকারীর বক্তব্য, এই নির্দেশের পরই শব্দবাজি হোক বা আতসবাজি তার বাড়বাড়ন্ত অনেকক্ষেত্রেই কম ছিল। তাতে মানুষ উপকৃত হয়েছিল। আগামী মাসেই কালীপুজো সহ একাধিক পুজো রয়েছে। আবেদনকারীর উল্লেখ করেছেন, পুজোর পরে সংক্রমণ বাড়ছে, চিকিৎসকরা বলছেন করোনায় সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় ফুসফুস। বাজি পোড়ানো থেকে ধোঁয়া বেরোলে তাতে সমস্যা হবে করোনা রোগীর।
করোনা নিয়ে যাবতীয় বিধি-সতর্কতা উড়িয়ে, চিকিত্সকদের বারবার সাবধান করাকে উপেক্ষা করে প্রায় এভাবেই প্যান্ডেব হপিং করেছে বঙ্গবাসী। আর সপ্তাহ খানেক আগে, উন্মাদনার এই মূহূর্তগুলিই আজ বিপদের বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুজো মিটতেই পশ্চিমবঙ্গে ফের ঊর্ধ্বমুখী করোনা সংক্রমণের গ্রাফ। বাড়তে শুরু করেছে করোনা আক্রান্তের মৃত্যুও। যা দেখে চিকিত্সকরা বলছেন, খাল কেটে কুমীর আনার মতো, করোনার সংক্রমণ, যা প্রায় নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছিল, তাকেই আবার বাড়িয়ে তোলা হয়েছে।
পুজোর পর থেকে করোনার সংক্রমণ কীভাবে বেড়েছে, তা পরিসংখ্যান দেখলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে। স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন বলছে, এবছর পুজোর ১০ দিন আগে, ১ অক্টোবর কলকাতায় করোনা আক্রান্ত হন ১৪৬ জন। দোসরা অক্টোবর সেই সংখ্যা ছিল ১৪৯। ৩ অক্টোবর দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ১৪৫। কিন্তু পুজো মিটতেই, দ্বাদশীতে কলকাতায় আক্রান্ত হন ১৭৯। পরের দিনগুলিতে ক্রমশ দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে।
সব মিলিয়ে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে কলকাতায় করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন ১ হাজার ১৪ জন। মৃত্যু হয়ছিল ১৯ জনের। আর পুজোর পর তৃতীয় সপ্তাহে কলকাতায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয় ১ হাজার ২৬৭। মৃত্যু হয়েছে ১৯ জনের। আর চতুর্থ সপ্তাহের প্রথম তিনদিনেই কলকাতায় আক্রান্তের সংখ্যা ৭৮৩। ফলে জলের মতোই পরিষ্কার, পুজো মিটতেই কলকাতায় বাড়তে শুরু করেছে করোনা সংক্রমণের প্রকোপ। আর মারণভাইরাসের এই যে বাড়বাড়ন্ত, তা শুধু কলকাতায় নয়, দেখা দিয়েছে গোটা রাজ্যেই।