নদিয়া ও বর্ধমান: শান্তিপুরে নৌকাডুবিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৯। হাহাকারের সঙ্গে মিশেছে ক্ষোভও। এর মধ্যেই দুর্ঘটনা সংক্রান্ত রিপোর্ট কেন্দ্রকে পাঠিয়েছে রাজ্য সরকার।
শনিবার রাতের দুর্ঘটনা। এখনও খোঁজ নেই বহু মানুষের। এখনও নদীবক্ষ থেকে তোলা যায়নি দুর্ঘটনাগ্রস্ত নৌকাটি। দেহ উদ্ধার হয়েছে ১৯টি। তার মধ্যে ১৮ জনকে সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।
ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, নৌকার নীচে বহু দেহ চাপা পড়ে থাকতে পারে। নৌকা তুললে দেহগুলি ভেসে উঠবে। তাতে মানুষের ক্ষোভ আরও বাড়বে বলেই নৌকাটি তোলার উদ্যোগ নিচ্ছে না প্রশাসন।
যদিও, নদিয়ার জেলাশাসকের দাবি, যে জায়গায় নৌকাডুবি হয়েছে, সেখানকার গভীরতা ৬৫ ফুটের কাছাকাছি। ডুবুরিরা ৪৫ ফুট পর্যন্ত যাচ্ছেন। তার নীচে কিছু দেখা যাচ্ছে না।
কীভবে এমন ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে নবান্নর কাছে রিপোর্ট তলব করে প্রধানমন্ত্রীর দফতর। আজ সেই রিপোর্ট দিয়েছে রাজ্য। নবান্ন সূত্রে খবর, সেখানে বলা হয়েছে, প্রায় একশো জন যাত্রী নিয়ে ছাড়ার পর শেষ মুহূর্তে লাফিয়ে উঠে পড়েন বেশ কিছু লোক। তার ফলে আর টাল সামলাতে পারেননি নৌকাচালক। নৌকা উল্টে মৃত্যু হয়েছে অনেকের।
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, ফেরিঘাটে পুলিশ তাকা সত্বেও তাদের সামনে কীভাবে নৌকাটিতে শতাধিক যাত্রী তোলা হল?
শনিবার বর্ধমানের কালনা ঘাট থেকে নদিয়ার শান্তিপুরের নৃসিংহপুর ফেরি ঘাটে যাওয়ার পথে হঠাৎই উল্টে যায় শতাধিক যাত্রীবোঝাই নৌকাটি। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, অতিরিক্ত যাত্রী তোলা হচ্ছে দেখেও, পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।
তার মধ্যেই দ্রুত উদ্ধারকাজ শুরু না হওয়ায় গতকাল রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় শান্তিপুরের নৃসিংহপুর ফেরি ঘাট এলাকা। পুলিশ-জনতা খণ্ডযুদ্ধ শুরু হয়। ইটের ঘায়ে মাথা ফাটে ২ পুলিশকর্মীর। বেশ কয়েকটি লঞ্চ ও নৌকায় আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাবার বুলেট ছোঁড়ে পুলিশ। ফাটানো হয় কাঁদানে গ্যাসের শেল।
এদিকে, ক্ষোভ-হাহাকারের মধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে দুর্ঘটনাস্থল ঘিরে টানাপোড়েন! একদিকে নদিয়া পুলিশের বক্তব্য, দুর্ঘটনা ঘটেছে বর্ধমানের কালনা থানা এলাকায়। অন্যদিকে, বর্ধমান পুলিশের দাবি, মৃতদের অধিকাংশই নদিয়ার শান্তিপুরের বাসিন্দা! যা শুনে ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের প্রশ্ন, কোন এলাকায় দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা কি কোনওভাবে লঘু করতে পারবে প্রিয়জন হারানো এই মানুষগুলোর শোকের ভারকে?