সুজিত মণ্ডল, নদিয়া: সরকারি হাসপাতালের বেডে চিকিৎসাধীন করোনা রোগী। আর সেই জীবিত রোগীর নামেই কিনা ইস্যু হল ডেথ সার্টিফিকেট।
নদিয়ার কল্যাণী কোভিড হাসপাতালের বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগে সরব ধানতলার হিজুলী এলাকার একটি পরিবার।
জানা গিয়েছে, ১০ মে শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি হন সুব্রত কর্মকার। ১৩ মে করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসায় ওইদিনই কল্যাণী কোভিড হাসপাতালে তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয়।
পরিবার সূত্রে খবর, ১৪ মে সকাল ১০টা নাগাদ হাসপাতাল থেকে ফোন করে সুব্রতর মৃত্যু সংবাদ জানানো হয়। সাতাশ বছরের যুবকের মৃত্যুর খবরে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
চরম দুঃসংবাদ পেয়ে হাসপাতালে যান বাবা। ছেলের মৃত্যুর শংসাপত্র সংগ্রহ করেন তিনি। কল্যাণী কোভিড হাসপাতালের তরফে যে ডেথ সার্টিফিকেট তাঁকে দেওয়া হয়েছে, তাতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, ছেলে সুব্রতকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়েছে তাতে।
আরও দুর্ভাগ্যের হল, সুব্রতর বাবা সত্যরঞ্জন কর্মকারকেও মৃত বলে উল্লেখ করা হয়েছে সেখানে। তাঁর নামের আগে জুড়ে দেওয়া হয়েছে "Late" শব্দটি।
যন্ত্রণার এখানেই শেষ নয়। অন্ত্যেষ্টির আগে ছেলের দেহ শেষবারের মতো দেখার জন্য দুপুর থেকে সন্ধে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় বাবাকে। সত্যরঞ্জন জানান, হাসপাতাল থেকে বলল ডোম নেই এখন। ডোম আসে সন্ধে ৬টায়।
এরপরই শুরু হয় নাটকের পর নাটক। ডোম পরপর দুটি মৃতদেহ দেখালে, দুটিই চিনতে অস্বীকার করে সুব্রতর পরিবার। আর এতেই সন্দেহ বেড়ে যায় ডোমের। করোনা ওয়ার্ডে গিয়ে সুব্রত কর্মকার নাম ধরে ডাকতে শুরু করেন তিনি। তা শুনতে পেয়ে বিছানা থেকে সাড়া দেন রোগী।
সত্যরঞ্জন কর্মকার বলেন, ডোমই খুঁজে বের করে আসল সত্য। ও যখন ডাকাডাকি করল, তখন ছেলে বলল, এই যে আমি সুব্রত। রোগীর মা তাপসী কর্মকার বলেন, আমি তো শুনেই কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম।
এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়ে যায় হাসপাতালে। আতঙ্কে মুচলেকা দিয়ে করোনা আক্রান্ত ছেলেকে হাসপাতাল থেকে ছাড়িয়ে বাড়িতে নিয়ে আসেন বাবা। আপাতত সেখানেই একটি ঘরে কোয়ারেন্টিন রয়েছেন সুব্রত। পঞ্চায়েতের তরফে এলাকা স্যানিটাইজ করা হয়েছে।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে কল্যাণী কোভিড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মুখ খুলতে চায়নি। কল্যাণীর মহকুমা শাসক জানিয়েছেন, বিষয়টি নদিয়া জেলার মুখ্য স্বাস্থ্যআধিকারিককে জানানো হয়েছে। তিনি তদন্ত করে জানাবেন। তারপর যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।