কলকাতা: বিভিন্ন জেলায় শিশুদের জ্বর নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেন রাজ্যপাল। জগদীপ ধনকড় জানান, সংক্রমণের ওপর শুরু থেকে নজর দেওয়া উচিত ছিল। তাঁর আশা, দ্রুত স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ঠিক হবে।


তিনি বলেন, গোটা বিষয়টি আমার নজরে রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণও করা হয়েছে। আমার মতে, সকলে মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করা উচিত। শুধু এটাই নয়, যে কোনও বিষয়ে এটা জরুরি। আমি আগেও শিশু স্বাস্থ্যের বিষয়ে আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান করেছি। আমার আশা, রাজ্যে দ্রুত স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ঠিক হবে। 


শিশু অসুস্থতার ঘটনায় প্রতিক্রিয়া দেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, আমরা তো আর ডাক্তার নই। আমরা তো সরকারকে বারবার বলেছি। গতকালও বলেছি, সরকার যেন অবিলম্বে ব্যবস্থা নেয়। মেডিকেল টিম তৈরি করে কেন্দ্রীয় সরকারের বা এইধরনের বিশেষজ্ঞ যাঁরা আছেন, তাঁদের সহযোগিতা নেওয়া উচিত। 


বিজেপি রাজ্য সভাপতির মতে, জ্বর কেন হচ্ছে, কি হচ্ছে একাধিক উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। একটা অজানা রোগ। তার একটা নাম বের করেছে, জাপানি এনসেফালাইটিস।


তিনি যোগ করেন, এদিকে ডেঙ্গি, টাইফাস সব একসঙ্গে শুরু হয়েছে। শুধু মালদায় নয়, সারা পশ্চিমবঙ্গে প্রায় হাজার দুয়েক শিশু বা তারও বেশি অসুস্থ হয়েছে। কয়েকজন মারাও গিয়েছে। আরও কয়েকজন সিরিয়াস। পরিস্থিতি খুব জটিল রয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।


করোনা অতিমারীর মধ্যেই এবার জ্বরের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে রাজ্যে। সূত্রের দাবি, গত ৩ দিনেই প্রাণ হারিয়েছে ৬ শিশু। শুক্রবার সকালে মালদায় মৃত্যু হয়েছে আরও ২ শিশুর। 


দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুর, মালদা থেকে কলকাতা-- জ্বরে আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। চারদিকে আতঙ্ক-উদ্বেগ।  হাসপাতালে উপচে পড়ছে ভিড়। 


শিশুদের মধ্যে এই জ্বর থাবা বসিয়েছে রাজ্যের পশ্চিমাংশেও। পুরুলিয়া, পশ্চিম বর্ধমানেও আতঙ্ক বাড়াচ্ছে জ্বর। উপসর্গ বলতে জ্বর, শুকনো কাশি সঙ্গে শ্বাসকষ্ট।


গত ২৪ ঘণ্টায় জ্বরে আক্রান্ত হয়ে, মালদা মেডিক্যাল কলেজে ৩ দিনে ৫ শিশুর মৃত্যু হয়েছে।  সূত্রের খবর, মালদা মেডিক্যাল কলেজে বর্তমানে চিকিৎসাধীন ১৬৪ জন শিশু। ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। 


এর আগে, গত ২ দিনে জলপাইগুড়ি জেলা সদর হাসপাতালে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে তিন শিশুর মৃত্যু হয়। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৯৫ জন শিশু। পুরুলিয়ার দেবেন মাহাতো হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ২৩৫ জন শিশু। 


এছাড়া, কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজে ৮০ জন, আসানসোল জেলা হাসপাতালে ৬৪ জন, দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ৪২ জন, রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজে ২০ জন ও উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজে ৭জন শিশু ভর্তি রয়েছে।  


কোভিড কালে শিশুদের এই জ্বর নিয়ে চিন্তিত এবং সতর্ক স্বাস্থ্য ভবনও। পরিস্থিতির উপর নজর রাখতে স্বাস্থ্য ভবন একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে।


স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, মূলত ইনফ্লুয়েঞ্জা B ও RS ভাইরাসের জেরেই শিশুরা জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, অজানা জ্বর নয়। সার্স বা ইনফ্লুয়েঞ্জা বি ও আরএস ভাইরাস।


এদিকে স্বাস্থ্য অধিকর্তা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। গত চার বছরের পরিসংখ্যান দেখিয়ে তিনি এও দাবি করেছেন, গত বছরগুলির তুলনায় আক্রান্তের সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে, এমনটা মোটেও নয়। 


উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ১ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে ১ হাজার ১৯৫ জন শিশু ভর্তি হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ২ জনের। জন্মগত সমস্যার কারণেই দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। একজনের হৃদযন্ত্রের সমস্যা ছিল। আরেকজনের জন্মের সময় ওজন কম ছিল। 


জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের ওখানে ভর্তি থাকা ১০ জন শিশুর সোয়াব টেস্ট করা হয়। ৪ জনের শরীরে মিলেছে ইনফ্লুয়েঞ্জা B ও ৩ জনের ক্ষেত্রে RS Virus। 


ইনফ্লুয়েঞ্জা যেহেতু ছোঁয়াচে, তাই জ্বরে আক্রান্তদের জন্য পৃথক ওয়ার্ড ও পেডিয়াট্রিকে বেড বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।