সঞ্চয়ন মিত্র, কলকাতা: আজ মহালয়া৷ পিতৃপক্ষের অবসান৷ শাস্ত্রমতে দেবীপক্ষের আগের কৃষ্ণা প্রতিপদে মর্ত্যধামে নেমে আসেন পিতৃপুরুষরা৷ অপেক্ষা করেন উত্তরসূরীদের কাছ থেকে জল পাওয়ার৷ মহালয়ার দিন অমাবস্যায় তাঁদের উদ্দেশ্যে জলদানই তর্পণ৷


গোটা পিতৃপক্ষজুড়ে তর্পণ করা যায়। তবে পিতৃপক্ষের শেষে অমাবস্যা তিথি, তর্পণের শ্রেষ্ঠ সময় হিসেবে ধরা হয়। পৌরাণিক কাহিনিতে কথিত আছে, পূর্ব পুরুষদের উদ্দেশে জলদান করা হলে, তাঁরা তৎক্ষণা ৎ গ্রহণ করে আর্শীবাদ করেন। এভাবেই পূর্ব পুরুষদের তৃপ্ত করা হয়।মহালয়ার মাহেন্দ্রক্ষণে পিতৃপুরুষের উদ্দেশে কিছু অর্পণই হল তর্পণ। তর্পণ যে কেবল পূর্বপুরুষদের জন্য তা নয়, পৃথিবীর সামগ্রিক সুখ, স্বাচ্ছন্দ্যে, উত্তোরণের উদ্দেশে। সেই কারণেই তর্পণ মন্ত্রে বলা হয়ে থাকে, "তৃপ্যন্তু সর্বমানবা"। অর্থাৎ মানবজাতিকে তৃপ্ত করার দিন। এই তর্পণ শব্দের ব্যুৎপত্তি হল তৃপ + অনট। তৃপ ধাতুর অর্থ তৃপ্তি সাধন করা। এখানে তৃপ্তি সাধন বলতে দেব-ঋষি- পিতৃ-মনুষ্যগণের তৃপ্তিসাধনকে করার অর্থে ব্যবহার করা হয়। মহালয়ের এই লগ্নে যাঁদের পুত্র নেই, যাঁদের কেউ নেই, তাঁদেরও স্মরণ করা হয়ে থাকে তর্পণের মাধ্যমে। 


আরও পড়ুন, মহালয়ার দিনেই কেন তর্পণ করা হয়?


তর্পণের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে পুরাণবিদ  শিবশঙ্কর ভারতী বলেন, "পুকুর থেকে নদী। যে কোনও জলাশয়ে তর্পণ করার রীতি আছে। কারা করতে পারবেন তর্পণ?নারী পুরুষ জাতি ধর্ম নির্বিশেষ তর্পণ করতে পারেন। মহালয়ার সকালে গঙ্গার ঘাটে ঘাটে তর্পণ যেন, অতীতের ভিত্তিকে একবার ছুঁয়ে দেখা। অতীতকে শ্রদ্ধা জানিয়ে শিকড়ের অভিমুখে ফেরা। 


হিন্দুশাস্ত্রে নানারকম তর্পণের কথা বলা হয়েছে, যেমন, দেব তর্পণ, গুরু তর্পণ, মনুষ্য তর্পণ, ঋষি তর্পণ, দিব্যপিতৃ তর্পণ, যম তর্পণ, ভীষ্ম তর্পণ, পিতৃ তর্পণ, মাতৃ তর্পণ, অগ্নিদগ্ধাদি তর্পণ, রাম তর্পণ ও লক্ষণ তর্পণ।  পিতৃপক্ষের শেষ লগ্নে তর্পণ করা হয় এই মন্ত্রের সঙ্গে- "পিতা স্বর্গঃ পিতা ধর্ম্মঃ পিতা হি পরমন্তপঃ। পিতরি প্রীতিমাপন্নে প্রীয়তে সর্ব্ব দেবতাঃ।"