মালদা: বৈষ্ণবনগর বিস্ফোরণকাণ্ডের ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া শতাধিক প্লাস্টিক বল-বোমাকে ঘিরে নতুন চাঞ্চল্য। চার কিলোমিটার দূরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত। ফলে এই ঘটনার সঙ্গে বর্ধমানের খাগড়াগড়কাণ্ডের মতো জঙ্গি-যোগ আছে কি না তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে এনআইএ।
চারদিকে এখনও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বিস্ফোরণের চিহ্ন। আতঙ্কে সিঁটিয়ে আছেন গ্রামবাসীরা। মালদার বৈষ্ণবনগরের কুম্ভীরা গ্রামে তৃণমূল নেতার আত্মীয়র বাড়িতে বোমা বাঁধতে গিয়ে চার জনের মৃত্যু! বোমা নিষ্ক্রিয় করতে গেলে ফের বিস্ফোরণ! যার বলি হলেন সিআইডির বম্ব ডিসপোজাল স্কোয়াডের ২ কর্মী!
রবিবার রাতের বিস্ফোরণের খবর পেয়ে সোমবার সকালে ঘটনাস্থলে যায় সিআইডির বম্ব ডিসপোজাল স্কোয়াড। না ছিল বিস্ফোরক প্রতিরোধক পোশাক, না ছিল কোনও সরঞ্জাম। স্থানীয় সূত্রে খবর, বোমার মশলা ভর্তি বস্তা উদ্ধারের পর, সেগুলি নষ্ট করার কাজ করছিলেন বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞরা। সেই সময় ঘটে যায় দ্বিতীয় বিস্ফোরণ!
কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে জোড়া বিস্ফোরণ। বম্ব স্কোয়াডের দুই কর্মী-সহ ৬ জনের মৃত্যু। কিন্তু, এখনও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
মঙ্গলবার নিহত এএসআই বিশুদ্ধানন্দ মিশ্র এবং কনস্টেবল সুব্রত চৌধুরীকে মালদার পুলিশ লাইন মাঠে গান স্যালুটের মাধ্যমে গার্ড অফ অনার দেওয়া হয়। উপস্থিত ছিলেন এডিজি সিআইডি রামফল পাওয়ার ও ডিআইজি সিআইডি দিলীপ আদক।
কিন্তু, এতেও ক্ষান্ত হচ্ছেন না নিহতদের পরিবার। বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় পুলিশি অপদার্থতাকেই দায়ী করলেন সিআইডি-র দুই নিহত কর্মী বিশদানন্দ মিশ্র ও সুব্রত চৌধুরীর পরিবার।
তাদের অভিযোগ, এসপি-র তাগাদাতেই গতকাল বিস্ফোরক নিরোধক পোশাক ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ছাড়া ঘটনাস্থলে ছুটে যেতে হয় বম্ব স্কোয়াডের দুই কর্মীকে। এতবড় ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরেও বাহিনীর তরফ থেকে পরিবারকে কিছু জানানো হয়নি বলেও অভিযোগ।
নিহত দুই পুলিশকর্মীর পরিবারের আরও দাবি, বিস্ফোরণের পাঁচ ঘণ্টা পরেও দুজনের চিকিৎসা শুরু হয়নি। হাসপাতালে ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি পরিবারের লোকজনকে।
উপযুক্ত পোশাক ও সরঞ্জাম ছাড়া সিআইডির বম্ব ডিসপোজাল স্কোয়াডের কর্মী ঘটনাস্থলে যাওয়ায় সিআইডির কর্মপদ্ধতি নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। এদিন মালদা গিয়ে সিআইডির এডিজি রামফল পওয়ার জানান, গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
জেলা পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিকদের নিয়ে বিস্ফোরণস্থলও ঘুরে দেখেন সিআইডি কর্তারা।
আশঙ্কাজনক অবস্থায় কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন বিস্ফোরণে জখম বম্ব ডিসপোজাল স্কোয়াডের আরেক এএসআই মনিরুজ্জামান।
বৈষ্ণবনগর বিস্ফোরণকাণ্ডে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে এনআইএ-ও। ঘটনাস্থল থেকে শতাধিক প্লাস্টিক বল বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। চার কিলোমিটার দূরে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত। আবার বোমাগুলিও ছিল উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন। স্বভাবতই, বর্ধমানের মতো এই ক্ষেত্রেও জঙ্গি-যোগ রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদিও, এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি।