অভিজিৎ চৌধুরি, মালদা : ক্যান্সারে আক্রান্ত। যার ফলে কাটা গেছে বাঁ পা। চিকিৎসায় অনেক খরচ। ফলে বাড়িতেও দেখা দিয়েছে অর্থাভাব। তবুও হার মানতে রাজি নয় দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী আয়েশা সিদ্দিকা। প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে এগিয়ে যেতে চায় সে। মারণ রোগ ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই চালাচ্ছে এ বছরের উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী আয়েশা।


আয়েশার বাবা দিনমজুর। ধার দেনা করে কোনওরকম মেয়ের চিকিৎসার জন্য অর্থ জোগাড় করেছিলেন। ভিন রাজ্যে গিয়েছিলেন চিকিৎসার জন্য। সেখানে স্বাস্থ্য সাথী কার্ড দেখিয়ে কোনও লাভ হয়নি। এই পরিস্থিতিতে ক্যান্সারকে হারিয়ে জীবনে এগিয়ে যেতে চায় মেধাবী ছাত্রী তথা দিনমজুরের মেয়ে আয়েশা। আর্থিক সাহায্য করে পাশে দাঁডডিয়েছেন তৃণমূল নেতা বুলবুল খান।


হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লকের মালিওর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার সিমরাহা গ্রাম। সেই গ্রামে বাড়ি আয়োশার। মিটনা উচ্চ-বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী সে। বেশ কয়েক মাস আগে বাঁ পায়ে ব্যথা অনুভব হওয়ায় স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু সেই চিকিৎসায় সাময়িক স্বস্তি মিললেও পরে আবার ব্যথা বাড়তে থাকে। পরে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে বেশ কয়েকটি পরীক্ষার পর ধরা পড়ে আয়েশার পায়ে ক্যান্সার হয়েছে। পা কেটে বাদ না দিলে সারা শরীরে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়বে। এখন বাঁ পা হারিয়ে লক্ষ্যে অবিচল আয়েশা।


এত কিছুর পরও ভেঙে পড়তে রাজি নয় আয়েশা। সামনে আরও কঠিন লড়াই। তার পাশে দাঁড়িয়েছে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এবং এলাকার তৃণমূল নেতা তথা শিক্ষক বুলবুল খান। তাঁরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন আয়েশার দিকে। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে ছোট আয়েশা। এলাকায় নিতান্তই দরিদ্র পরিবার বলেই পরিচিত তারা। আর্থিক অভাবে দুটোর বেশি কেমো থেরাপি দিতে পারেনি আয়েশার পরিবার। মাটির ভাঙা ঘরের বারান্দায় বসে বৃদ্ধ পিতা দিনমজুর জিয়াউল হক। মেয়ের দুরবস্থার কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন জিয়াউল সাহেব। 


তিনি জানান, অনেক ভাবে ওর পা বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। ভিন রাজ্যে চিকিৎসা করাতে গিয়ে স্বাস্থ্য সাথী কার্ড কোনও কাজে আসেনি। এদিকে মেয়ের চিকিৎসার জন্য তিনি নিঃস্ব হয়ে গিয়েছেন। টাকার অভাবে মেয়ের সবকটি কেমোও দিতে পারেননি। তবে মেয়ের সার্বিক সুস্থতার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং এলাকার তৃণমূল নেতা বুলবুল খান পাশে দাঁড়ানোয় কিছুটা ভরসা পাচ্ছেন জিয়াউল। 


আয়েশা জানায়, বেশ কয়েক মাস আগে তার বাঁ পায়ে ব্যথা হয়। স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করানোর পর সাময়িক সুস্থতা লাভ করলেও আবার সেই ব্যথা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। তারপরে বাধ্য হয়ে কলকাতায় এনআরএস মেডিকেল কলেজে বায়োপসি করানো হয়। সেখানেই ধরা পড়ে যে পায়ে ক্যান্সার হয়েছে। এরপরে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনে আয়েশা বেঙ্গালুরুতে যায় বাবা মায়ের সঙ্গে। সেখানে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকের পরামর্শে তার বাঁ পা কাটা যায়। এখন এক পায়ে আয়েশা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যে সে, ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে সামনে এগিয়ে চলবে। জীবনে কিছু করে দেখাতে মরিয়া আয়েশা।


শিক্ষক তথা জেলা তৃণমূল সাধারণ সম্পাদক বুলবুল খান এই প্রসঙ্গে জানান, মেয়েটির ব্যাপারে তিনি সবরকম সাহায্য করবেন। তাছাড়া মেয়েটির চিকিৎসা ও পড়াশোনার ক্ষেত্রে যা যা সাহায্য দরকার হবে, তা করতে প্রস্তুত তৃণমূল নেতা তথা শিক্ষক বুলবুল খান।