কলকাতা: শুক্রবার তৃণমূলের কোর কমিটির বৈঠকে বিজেপি-সিপিএমকে এক আসনে বসিয়ে, কংগ্রেসের প্রতি নরম মনোভাব দেখানোর বার্তা দেন তৃণমূলনেত্রী!
সূত্রের খবর, তিনি বলেন, উন্নয়নকে হাতিয়ার করে একের পর এক নির্বাচনে জিতছে তৃণমূল। রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে না পেরে, সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে বিজেপি ও সিপিএম নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। যত দিন যাবে, এই অপপ্রচার আরও বাড়বে। সঙ্গে সঙ্গে তার পাল্টা জবাব দিতে হবে। কিন্তু কংগ্রেস সম্পর্কে এখনই কিছু বলার দরকার নেই। এ ব্যাপারে যা করার আমিই করব, বিষয়টি আমার ওপর ছেড়ে দিন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে সনিয়া-রাহুলের সঙ্গে বৈঠক করে ফেরার পর, মমতার এই বার্তা যথেষ্ট তাৎপযপূর্ণ বলেই মনে করছে পর্যবেক্ষকদের একাংশ।
আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আসন সংখ্যার নিরিখে একাই ৫ জনকে জেতাতে পারে তৃণমূল। একটি আসনের জন্য, যদি কংগ্রেস-তৃণমূল সমঝোতা হয়, তাহলে বামেদের সমর্থন ছাড়াই, ওই দু’দলের সম্মিলিত প্রার্থী জিতে যেতে পারেন।
সূত্রের খবর, এ ব্যাপারে কংগ্রেস হাইকমান্ডের কাছে তৃণমূলের তরফে বার্তাও গিয়েছে! কিন্তু, এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে অধীর চৌধুরী কী করবেন? কারণ, তৃণমূল সম্পর্কে তাঁর সুর তো বরাবরই চড়া। আসন্ন রাজ্যসভার ভোটে ষষ্ঠ আসনের জন্য কংগ্রেস হাইকম্যান্ড এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, উভয়ের পছন্দ, এমন কোনও ব্যক্তির নাম চূড়ান্ত হলে প্রদেশ কংগ্রেস কি তা মেনে নেবে?
এদিনই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বলেন, রাজ্যসভা ভোটে প্রার্থীর ব্যাপারে দল সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে, পরিষদীয় দলকে যেন কনফিডেন্সে নেওয়া হয়। নাম চূড়ান্ত যেন একতরফাভাবে না করে হাইকমান্ড। সেটা আমরা একতরফা মেনে নেব না।
সূত্রের খবর বিধানসভায় কংগ্রেসের পরিষদীয় দলের বৈঠকে অধীর চৌধুরী এও বলেন, রাজ্যে যখন কংগ্রেস কর্মীরা তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন, মার খাচ্ছেন, তখন দিল্লি গিয়ে তৃণমূলনেত্রী নীতি-আদর্শের কথা বলছেন। আমাদের দলনেত্রীর সঙ্গে তাঁর বৈঠকের ছবি দেখা যাচ্ছে। এর ফলে স্বাভাবিকভাবেই রাজ্যের কংগ্রেস কর্মীদের মধ্যে হতাশা তৈরি হচ্ছে।
তৃণমূল নিয়ে অধীর চৌধুরীর সুর যেখানে অত্যন্ত চড়া, সেখানে শুক্রবারই আব্দুল মান্নানের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর একপ্রস্থ কথাবার্তা হয়। বিধানসভার অধিবেশন শেষে নিজের আসন ছেড়ে বিরোধী দলনেতার আসনের কাছে যান মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে তখন কংগ্রেস ও বাম বিধায়করাও হাজির ছিলেন। সূত্রের খবর, আব্দুল মান্নানের উদ্দেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, শরীর কেমন আছে? খাওয়া-দাওয়া আগের থেকে কমিয়েছেন তো? প্রত্যুত্তরে কংগ্রেস বিধায়করা বলেন, না। এরপর বিরোধী দলনেতার উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, না না, শরীরের যত্ন নিন। খাওয়া-দাওয়া কমান। সাবধানে থাকুন।
অধীরের সুর যখন চড়া, তখন মমতা-মান্নান কথাবার্তা অন্য কোনও সমীকরণের দিকে ইঙ্গিত করছে কি না, সেই জল্পনা তুঙ্গে। এদিন, কংগ্রেস বিধায়ক প্রতিমা রজকের বিয়ের ব্যাপারেও, কংগ্রেস বিধায়কদের থেকে খোঁজখবর নেন মমতা। উপহার কেনার জন্য, কান্দির বিধায়ক অপূর্ব সরকারের হাতে ২ হাজার টাকা তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। কংগ্রেস সম্পর্কে তৃণমূল নেত্রীর এই মনোভাব কি বিশেষ ইঙ্গিতপূর্ণ কি না, তার উত্তর মিলতে পারে রাজ্যসভার ভোটে।