হাওড়া: ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়ে রয়েছে করোনা আক্রান্তের মৃতদেহ। রাজ্যে দেহ নিয়ে পরিবারের হয়রানির ছবি নতুন নয়। আবারও দীর্ঘক্ষণ মৃতদেহ বাড়িতে পড়ে থাকার অভিযোগ উঠল। এবার ঘটনাস্থল হাওড়ার রামরাজাতলা এলাকা।
২৩ এপ্রিল ষষ্ঠীতলা এলাকার বাসিন্দা গোপাল চক্রবর্তীর করোনার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। বাড়িতেই তাঁর চিকিৎসা চলছিল বলে পরিবার সূত্রে খবর। এরপর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গতকাল রাত ২টো নাগাদ বাড়িতে তাঁর মৃত্যু হয়। পরিবারের দাবি, তারপর থেকে পুরসভার হেল্পলাইন নম্বর, স্বাস্থ্য দফতরের হেল্প লাইন নম্বরে একাধিকবার ফোন করেও উত্তর মেলেনি। একাধিক ফোনের পরও মৃতদেহ বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়ার কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি বলে অভিযোগ করা হয়েছে পরিবারের তরফে।
দীর্ঘ সময় করোনা আক্রান্তের মৃতদেহ পড়ে থাকায় স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্ক ছড়ায় এলাকায়। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, দীর্ঘ ১০ ঘণ্টা পড়ে থাকার পর অবশেষে পুরসভার গাড়ি আসে। মৃতদেহ সৎকারের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়।
মহামারী আবহে একাধিক অমানবিক ঘটনার সাক্ষী হয়েছে রাজ্য। করোনার সংক্রমণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পরিষেবা দিতে নাজেহাল প্রশাসন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে মৃত্যুর পর দীর্ঘসময় কেটে গেলেও দেহ সৎকার করতে হয়রানির শিকার হয়েছে রোগীর পরিবার। খাস কলকাতাতেও বারবার এমন খবর উঠে এসেছে সংবাদের শিরোনামে।
গতকালই খবর আসে, লেকটাউনে মৃত্যুর পর ১২ ঘণ্টা বাড়িতেই পড়ে রয়েছে মৃতদেহ। বিনা চিকিৎসায় করোনা আক্রান্ত রোগীকে ফেরানোর অভিযোগ ওঠে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের বিরুদ্ধে। এমনকী মৃতদেহ সৎকারের জন্য টাকা চাওয়ার চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে লেকটাউন থানার পুলিশের বিরুদ্ধে।
শুধু লেকটাউন নয়, শিলিগুড়িতেও এমন ছবি ধরা পড়ে। করোনা রোগীকে নিয়ে সারাদিন ঘুরেও কোনও বেড জোগাড় করতে পারেনি পরিবার। এরপর রাত দেড়টায় মৃত্যু হয় ওই রোগীর। তারপরও হয়রানি চলতে থাকে। মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার কাউকে না পেয়ে গতকাল সকালে বিশ্ব বাংলা ক্রীড়াঙ্গণের কোভিড হাসপাতালে মৃতদেহ নিয়ে আসে পরিবার। কিন্তু তারপরও দীর্ঘক্ষণ কেউ মৃতদেহ নিয়ে যায়নি বলে অভিযোগ করে পরিবার।
অবশেষে সেই খবর এবিপি আনন্দে সম্প্রচারিত হওয়ার পরেই নড়েচড়ে বসে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বেলা সাড়ে ১২ টা নাগাদ হাসপাতাল কর্মীরা পিপিই কিট পরে মৃতদেহটি হাসপাতালের ভিতরে নিয়ে যান। সবমিলিয়ে পরিস্থিতি ভয়াবহ। মৃত্যুমিছিল অব্যাহত। সোমবারের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ২৪ ঘন্টায় রাজ্যে করোনা আক্রান্তে সংখ্যা ১৫, ৯৯২, প্রাণ হারিয়েছেন ৬৮ জন করোনা রোগী।