কলকাতা: নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চের সঙ্গে আজ মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব সহ বিভিন্ন দফতরের সচিবদের বৈঠক।


উপস্থিত রয়েছেন রাজ্য পুলিশের ডিজি ও কলকাতার পুলিশ কমিশনার। মূলতঃ রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে। এরপর সাংবাদিক বৈঠক করবে নির্বাচন কমিশন।


গতকাল দিনভর প্রশাসনিক কর্তা ও রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে বৈঠক করেন চিফ ইলেকশন কমিশনার সুনীল অরোরা, ইলেকশন কমিশনার রাজীব কুমার, সুশীল চন্দ্র-সহ ফুল বেঞ্চের প্রতিনিধিরা।


সূত্রের খবর, আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত রিপোর্টে সন্তুষ্ট না হওয়ায়, একাধিকবার ডেকে পাঠানো হয় রাজ্যের এডিজি আইন-শৃঙ্খলা জ্ঞানবন্ত সিং-কে।


গতকাল এডিজি আইনশৃঙ্খলা জ্ঞানবন্ত সিংয়ের সঙ্গে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করলেন নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চের সদস্যরা।


তবে নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, এডিজি আইনশৃঙ্খলা বৈঠকে যে রিপোর্ট পেশ করেছেন, তাতে সন্তুষ্ট নয় ফুল বেঞ্চ। কমিশন সূত্রে খবর, বৈঠকে একের পর এক প্রশ্ন করা হয় জ্ঞানবন্তকে। কিন্তু তাঁর সব উত্তরে সন্তুষ্ট হতে পারেনি কমিশন।


সকাল সাড়ে ৯টায় প্রথমে তাঁরা বৈঠক করেন এডিজি আইনশৃঙ্খলা জ্ঞানবন্ত সিংহের সঙ্গে। এর আগে বাংলায় এসে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন ডেপুটি ইলেকশন কমিশনার সুদীপ জৈন।


সূত্রের খবর, সেইসময় রাজ্যে জামিন অযোগ্য ধারায় অভিযুক্ত কিন্তু গ্রেফতার নয়, এরকম সংখ্যা ছিল ৫০ হাজার। তবে সেই সংখ্যা এখন কমে হয়েছে ৩৮ হাজার।


সূত্রের দাবি, এদিনের বৈঠকে জ্ঞানবন্ত সিং জানান, ৫০ হাজারের মধ্যে ১২ হাজার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তখন ফুল বেঞ্চের তরফে জানতে চাওয়া হয়, অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে এত সময় লাগছে কেন?


জবাবে করোনা পরিস্থিতির কারণ দেখান এডিজি আইন-শৃঙ্খলা। সূত্রের দাবি, ফুলবেঞ্চের তরফে আরও জানতে চাওয়া হয়, বিগত ভোটে গন্ডগোল করেছিল, এরকম দাগী আসামীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?


প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে অপরাধী ও দুর্নীতিপরায়ণদের একটি তালিকা এডিজি আইনশৃঙ্খলা তুলে দিয়েছেন বলে সূত্রের খবর।


কিন্তু সূত্রের দাবি, রাজ্য প্রশাসনের তরফে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে এখনও পর্যন্ত যা যা রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে, তাতে সন্তুষ্ট নয় নির্বাচন কমিশন। মোট তিন দফায় এডিজি আইনশৃঙ্খলা জ্ঞানবন্ত সিং-এর সঙ্গে সুনীল আরোরাদের কথা হয়।


রাজীব কুমার থেকে অনুজ শর্মা ও এসএমএইচ মির্জা-- অতীতে একাধিক পুলিশ কর্তার ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিলেও, ভোট মিটতেই তাঁদের পদে ফিরিয়ে এনেছে রাজ্য সরকার।


এ ধরনের ঘটনাও নজরে রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। সূত্রের খবর, এ বিষয়ে এদিন জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের বৈঠকে কড়া বার্তা দিয়েছে ফুল বেঞ্চ। সূত্রের দাবি, কমিশন স্মরণ করিয়ে দিয়েছ, গাফিলতি দেখলেই সংশ্লিষ্ট আধিকারিকের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করবে নির্বাচন কমিশন। সেক্ষেত্রে শুধু বদলি নয়, প্রয়োজনে তাঁকে সাসপেন্ড করা হতে পারে।


অবাধ ভোটের স্বার্থে, সন্ত্রাস দমনে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করতে বলে স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। কলকাতা পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের বলা হয়, আরও বেশি পরিমাণ বেআইনি অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করতে হবে।


সূত্রের খবর, এদিন এডিজি আইনশৃঙ্খলার কাছে কমিশন জানতে চায়, সিভিক ভলান্টিয়াররা কী প্রক্রিয়ায় কাজ করেন। কমিশন সূত্রের খবর, শুক্রবার রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং এডিজি আইনশৃঙ্খলাকে নিয়ে ফের বৈঠক হবে।


সেই বৈঠকে সিভিক ভলান্টিয়ারদের ভূমিকা নিয়ে রিপোর্ট দেবে রাজ্য প্রশাসন। এছাড়াও কমিশন নির্দেশ দিয়েছে, সমস্ত পোলিং স্টেশন, গ্রাউন্ড ফ্লোরে করতে হবে।


২০১৬-র বিধানসভা ভোটে রাজ্যে মোতায়েন করা হয়েছিল ৭২৬ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, সেই সংখ্যা এবার ৩০ শতাংশ বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।


শুধু তাই নয়, ভোটের সময় এতদিন কেন্দ্রীয় বাহিনী কোথায় কোথায় টহল দেবে তা ঠিক করে দিত রাজ্য পুলিশ। তবে এবার সেই নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা রাজ্য পুলিশের হাতে নাও থাকতে পারে বলে, নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর।


প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, সিভিক ভলান্টিয়ার দিয়ে ভোট হবে না, বুথ লেভেল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী দিতে হবে।


রাজনৈতিক অশান্তি এড়িয়ে বাংলায় নির্বিঘ্নে ভোট করানোটাই এখন নির্বাচন কমিশনের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।