কলকাতা: যাদবপুরের মেধাবী প্রাক্তনী মিতা মণ্ডলের বাপের বাড়ির আর্জিতে সাড়া দিল রাজ্য সরকার। উলুবেড়িয়ার এই গৃহবধূর রহস্যমৃত্যুর তদন্ত শুরু করল সিআইডি। সবরকমভাবে পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। যদিও এখনও অধরা মিতার শাশুড়ি ও দেওর।
মিতার মৃত্যু নিয়েও ধোঁয়াশা অব্যাহত। পুলিশ সূত্রে খবর, ময়না তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ফাঁসে ঝুলেই মৃত্যু হয়েছে মিতা মণ্ডলের। যদিও প্রশ্ন উঠছে, যদি তাই হবে, তাহলে মিতার দেহে আঘাতের চিহ্ন এবং এত রক্ত এল কোথা থেকে?
সূত্রের খবর, ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশের অনুমান, মৃত্যুর আগে ব্যাপক মারধর করা হয়েছিল মিতাকে!
শ্বশুরবাড়ির তরফে আত্মহত্যার তত্ত্ব খাড়া করার চেষ্টা হলেও তা ফের খারিজ করে দিয়েছে মিতার পরিবার। তাদের অভিযোগ করেছে, মিতাকে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে। মৃতার এক আত্মীয়া বলেন, মারতে মারতে চুলগুলো পর্যন্ত ছিঁড়ে ফেলেছে। যে মেয়ে বলতে পারে পৃথিবীতে লড়াই করে বাঁচতে এসেছে, যে মেয়ে এতদূর পড়াশোনা করেছে, সে আত্মহত্যা করবে?
মিতাকে প্রথমে হাওড়ার যে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেখানকার কর্তৃপক্ষের বক্তব্যও মৃত্যুরহস্যে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে! হাসপাতালের চিফ অপারেটিং অফিসার শোভনদেব বেরা বলেন, ভোরে নিয়ে আসা হয়, রক্ত ছিল, মার্ডারও হতে পারে।
পুলিশ সূত্রে খবর, মিতার স্বামী দাবি করেছেন, বাড়ি থেকে মিতাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে সময় লেগেছিল এক ঘণ্টা। কিন্তু বাস্তবে দশ মিনিট সময় লাগে। সোমবার সকাল এগারোটা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে মিতার গড়িয়ার বাড়িতে ফোন যায়।
এর কিছুক্ষণ পর মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, মিতা মণ্ডলের ঘটনার তদন্ত সিআইডি করবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, এটা ছাড়া আরও যে গুলো নারী নির্যাতন হয়েছে, সেগুলোর প্রেক্ষিতে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দুপুর তিনটে নাগাদ নবান্নে যান মিতার বাবা, কাকা, দাদা ও ভাই। তাঁদের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপর মুখ্যমন্তীর বলেন, সিআইডিকে বলেছি। চিন্তা নেই, দোষীদের শাস্তি হবে। পরিবারের একজনকে সরকারি চাকরি দেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে, মিতার বিয়ের দেনার ৭০ হাজার টাকা মিটিয়ে নেবেন তিনি।
এদিকে, প্রশাসনের শীর্ষস্তরের সবুজ সঙ্কেত পেয়েই  কাজ শুরু করে দিয়েছে সিআইডি। এদিনই উলুবেড়িয়া গিয়ে পুলিশের হাত থেকে কেস ডায়েরি নেয় বিশেষ তদন্তকারী দল। মেয়ের মৃত্যুর বিচারের পাশাপাশি, মিতার পরিবারের চাওয়া এখন একটাই-- যারা পণ চাইছেন, তাদের বাড়িতে মেয়ের বিয়ে দেবেন না। আমার মতো কাউকে যেন সন্তান হারাতে না হয়!