কলকাতা:  কলকাতা হাইকোর্টে নন্দীগ্রাম মামলার এজলাস বদলের আবেদনের শুনানি শেষ হয়েছে। আজ রায়দান স্থগিত রাখলেন বিচারপতি কৌশিক চন্দ। শুনানিতে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।


হাইকোর্টে, নন্দীগ্রাম মামলার এজলাস বদলের আবেদনের শুনানিতে বৃহস্পতিবার বিচারপতি কৌশিক চন্দ মন্তব্য করেন, আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি কংগ্রেসের একজন নেতা। অন্য আইনজীবী সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের বিজেপি-যোগ রয়েছে। আর আপনারা মামলা লড়ছেন তৃণমূল চালিত সরকারের মুখ্যমন্ত্রীর হয়ে। তাহলে বিচারপতিকে নিয়ে প্রশ্ন কেন তোলা হচ্ছে? 


নন্দীগ্রাম বিধানসভা আসনে ভোট গণনায় কারচুপির অভিযোগ তুলে, কলকাতা হাইকোর্টে ইলেকশন পিটিশন দাখিল করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত শুক্রবার, সেই মামলা ওঠে বিচারপতি কৌশিক চন্দের বেঞ্চে। 


কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রীর আইনজীবী বলেন, বিচারপতি কৌশিক চন্দ একসময়, আইনজীবী হিসেবে বিজেপির হয়ে মামলা লড়তেন। 
তাই তাঁর প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।  সেজন্য মামলা অন্য এজলাসে পাঠানোর আবেদন জানান মুখ্যমন্ত্রী। 


বৃহস্পতিবার এই আবেদনের প্রেক্ষিতে শুনানি হল। মামলাকারী হিসাবে ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে। 


শুরুতে মুখ্যমন্ত্রীর আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভিকে বিচারপতি চন্দ প্রশ্ন করেন,  ১৬ই জুন আপনারা মামলা অন্য এজলাসে পাঠানোর জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করেছিলেন। ১৮ই জুন শুনানির সময় সে কথা আমাকে বলেননি কেন? 


আপনারা প্রশাসনিকভাবে প্রধান বিচারপতির কাছে বিচারপতি বদলের আবেদন করেছেন। সেই আবেদন নিয়ে প্রধান বিচারপতি এখনও কোন সিদ্ধান্ত নেননি।  এখন আবার আমার কাছে আবেদন করেছেন!


শুনানি করতে আমার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু, তাহলে আপনাদের প্রধান বিচারপতির কাছে করা আবেদন প্রত্যাহার করতে হবে। দুটো আবেদন একসঙ্গে চলতে পারে না। 


এরপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি এজলাসে আবেদনপত্র পড়ে শোনান। পূর্বে বিচারপতি কৌশিক চন্দ আইনজীবী হিসেবে বিজেপির হয়ে যে সব মামলা লড়েছিলেন, সেগুলি উল্লেখ করেন। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগের স্বপক্ষে একাধিক যুক্তি দেন। 


এরপরই বিচারপতি কৌশিক চন্দ বলেন, আমি যখন আইনজীবী হিসেবে প্রথম ডিভিশন বেঞ্চে মামলা করি, তখন বলেছিলাম, ভারতীয় জনতা পার্টির হয়ে মামলা লড়ব। 


বিচারপতিরা জিজ্ঞেস করেছিলেন - কোন পার্টি? উত্তরে বলেছিলাম, বিজেপি। তিনি আরও বলেন, আমি যখন থেকে বিজেপির হয়ে মামলা করি, তখন বিজেপির নাম কেউ জানত না।


ভিক্টোরিয়ার সামনে অমিত শাহর সভা নিয়ে মামলা হয়েছিল। ৩টি পর্যায়ে মামলা হয়েছিল। সেই মামলার পর, শীর্ষ স্থানীয় নেতারা আমায় ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন। অমিত শাহের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। বিচারপতি হয়ে যাওয়ার পরও ভালো লাগে যে, আইনজীবী হিসেবে এই ধরনের বড় বড় মামলা আমি করেছি।  


এরপরই, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী সিঙ্ঘভির উদ্দেশ্যে তিনি প্রশ্ন করেন, আপনি বিজেপির সাংগঠনিক কাঠামো জানেন?  বিজেপির যেকোনও সেলের মত লিগাল সেলের ক্ষেত্রেও শুধুমাত্র একটি পদ রয়েছে।


তা হল কনভেনার। আমি কখনওই কনভেনার ছিলাম না। তাদের হয়ে আইনজীবী হিসেবে কোনও কোনও মামলা লড়েছি, এটা ঠিক। কিন্তু, কনভেনার ছিলাম না। 
 
১৮ জুন যখন শুনানি হল, তখন আপনারা আমার এজলাস থেকে মামলা সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে কিছু বললেন না। আমি বাড়ি ফিরে বিষয়টি জানতে পারি। 


কেউ আমাকে বলছে মামলা ছেড়ে দেওয়া উচিত। কেউ বলছে উচিত নয়। আপনি বলুন, আমি যখন এই মামলা ছেড়ে দেওয়ার আবেদন শুনছি, তখন আমি কি প্রভাবিত হব না?


এরপরই এদিনের মতো রায়দান স্থগিত রাখেন বিচারপতি কৌশিক চন্দ।