কলকাতা: তিনদিনের মাথায় খোঁজ মিলল নিউ ব্যারাকপুরের গেঞ্জি কারখানার চার শ্রমিকের। কারখানার সিঁড়িতে মিলেছে দগ্ধ দেহ। পরিবার দেহ সনাক্ত করার পর নিখোঁজদের মৃত বলে ঘোষণা করবে প্রশাসন। 


বুধবার রাত ৩টে নাগাদ নিউ ব্যারাকপুরের শিল্প তালুকের ওই হোসিয়ারি কারখানায় আগুন লাগে। সেখানেই কাজ করছিলেন চার শ্রমিক। আগুন লাগার পর থেকেই চারজনের খোঁজ মিলছিল না। আশঙ্কা ছিল, যে তাঁরা সম্ভবত ভেতরে দগ্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন। সত্য়ি হল সেই আশঙ্কা।


৩৮ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও, ৭২-ঘণ্টা অতিক্রান্ত হওয়ার পরও এদিন সকালে ওই বাড়িতে কোথাও কোথাও আগুনের শিখা দেখা যায়। আজ সকালে বাড়ির ভিতরে ড্রোনের মাধ্যমে সন্ধান চালানো হয়। 


ইতিমধ্যেই ভেঙে ফেলা হয়েছে তিনতলা বাড়ির একাংশ। আজ ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাবেন সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা। বাড়িটি পুরোপুরি ভেঙে ফেলা হবে কি না, তা নিয়ে তাঁদের মতামত চাওয়া হবে।  


তিন তলা বাড়ির একদিকের অংশে ছিল গেঞ্জির কারখানা। অন্য একটি অংশে তিনতলা জুড়ে ছিল গুদাম।  দমকল সূত্রে খবর, গুদামে স্যানিটাইজার, অ্যান্টিসেপ্টিক, পিপিই কিট, ডায়পার, প্লাস্টিকের বোতল, অক্সিজেন ক্যানিস্টারের মতো দাহ্য বস্তু মজুত থাকায় আগুন ভয়াবহ চেহারা নেয়। 


বৃহস্পতিবার কারখানার লোহার গেট কেটেও আগুনের প্রচণ্ড তাপে ভিতরে ঢুকতে পারেননি দমকল কর্মীরা। শুক্রবারও ভিতরে ঢুকতে পারেনি উদ্ধারকারী দল। বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ পেলোডার দিয়ে ভেঙে ফেলা হয় কারখানার দেওয়াল। 


দমকলের ১৫টি ইঞ্জিন যখন আগুন নেভাতে ব্যস্ত, তখন পুলিশকর্মীরা বাইরে থেকে কারখানার ভিতরে নজরদারি চালানোর চেষ্টা করেন। বিকেল ৫টা নাগাদ আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর শুরু হয় কুলিং। 


দেড় দিন ধরে জ্বলতে থাকা বিল্ডিংয়ে জল দিতে থাকেন দমকলকর্মীরা। দেখা যায়, তিনতলা বিল্ডিংয়ের সারা শরীর জুড়ে তৈরি হয়েছে ফাটল। বেঁকে গিয়েছে বিম। 


ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন ডিজি ফায়ার, ডিআইজি ফায়ার এবং ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার।  দমকলের একটি গাড়ির মধ্যেই দমকলমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন তাঁরা।  দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু জানান, পূর্ত দফতরের আধিকারিকরা বিল্ডিং দেখে স্ট্রাকচারাল রিপোর্ট দেবেন। বিপজ্জনক নয়, এমন রিপোর্ট পেলে তবেই ভিতরে ঢুকবেন ফায়ার ও পুলিশের লোকেরা। নইলে পুরো বিল্ডিং ভেঙে ফেলা হবে।


গত ৮ মার্চ, স্ট্র্যান্ড রোডে রেলের নিউ কয়লাঘাট বিল্ডিংয়ে আগুন নেভাতে গিয়ে, চার দমকল কর্মীর মৃত্যু হয়। ওই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার আর কোনও রকম ঝুঁকি নিতে চায় না দমকল।