সুজিত মণ্ডল, রানাঘাট: অতীতে এমন ঘটনা প্রায়ই সংবাদ শিরোনামে এসেছে, যেখানে নবদম্পতি বিয়ের দিন অথবা বৌভাতের মতো অনুষ্ঠানে রক্তদান করছে। তাছাড়া পাড়ায় পাড়াও রক্তদান শিবির করার চল রয়েছে। এখন শহর কলকাতা ছাড়াও রাজ্যের একাধিক শহরাঞ্চলে চক্ষুদানের মতো মহৎ পদেক্ষপ নেওয়া হয়। কোনও সংস্থা বা ক্লাবের পক্ষ থেকেই মূলত এ ধরনের আয়োজন করা হয়। তবে বৌভাতের দিনে মরণোত্তর দেহদানের কথা শুনেছেন?


হ্যাঁ, বৌভাতের দিন মরণোত্তর দেহদান করে সংবাদ শিরোনামে উঠে এল নদিয়ার নবদম্পতি। অদিতি দাশগুপ্ত ও রোহন দাস। তথ্যপ্রযুক্তি তালুকের এই যুগল নিজেদের বৌভাতের দিনকে আরও স্মরণীয় করে রাখলেন এভাবেই। নবদম্পতি ছাড়াও আরও ১৮ জন নিমন্ত্রিত এদিন মরণোত্তর দেহদান করেছেন।



মরণোত্তর দেহদান করছেন নবদম্পতি।


রানাঘাট পাইক পাড়ার বাসিন্দা তিরিশোর্ধ  রোহন দাস এবং যাদবপুরের বাসিন্দা বছর সাতাশের অদিতি দাশগুপ্তের বৌভাত ছিল বৃহস্পতিবার। সেই দিনই রোহন ও অদিতি মরণোত্তর দেহদানের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হন। নবদম্পতির সঙ্গে আরও যে ১৮ জন মরণোত্তর দেহদানের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ক কর্মী, পুলিশ, শিক্ষক, পৌরকর্মী, গৃহবধূ এবং একজন কলেজ পড়ুয়াও।


কেন এই দিনটাকেই বেছে নিলেন? দাস বাড়ির নতুন বউ বলেন, “আমার ঠাকুমা আগেই দেহদান করেছেন। বাবা, মা-ও মরণোত্তর দেহদান করেছেন। আজ আমরাও করলাম। একই সঙ্গে আরও ১৮ জন এই মহৎ কাজে নিজেদের সামিল করলেন। আমাদের সাহায্যে যদি অন্যজনের প্রাণ বাঁচে, তাহলে তা করাই উচিত। দেহদান ভাল। এই সচেতনতাই সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছি। আর সেটার জন্য এর থেকে ভাল দিন কীই বা হতে পারে!” একই কথা রোহনেরও। বিয়েতে বাড়ির সবাইকে একসঙ্গে একই জায়গায় পাওয়া যায়। সব বয়সের মানুষ আসেন। সেক্ষেত্রে কাজটা আরও সহজ হয়। রোহন বলেন, “অনেক মৃত্যু দেখেছি। চক্ষুদান, রক্তদানের মতো মরণোত্তর দেহদানও যে প্রয়োজনীয় সেটা সবাইকে বোঝানো উচিত। সচেতনতা বাড়ানো উচিত।”


‘মরণোত্তর দেহদান, মনুষ্যত্বের অবদান’ ২৭ ফেব্রুয়ারি, নিজেদের বৌভাত অনুষ্ঠানে এই পোস্টারেই অতিথিদের নজর কেড়েছেন নবদম্পতি।