সমীরণ পাল, খড়দা(উত্তর ২৪ পরগনা): বাঙালি ও বাঙালি জিভের সঙ্গে ওতপ্রোত সম্পর্ক রয়েছে ফুচকার। অথচ, এই করোনাকালে, বিগত ২ বছর ধরে ফুচকার স্বাদ উপভোগ করা থেকে প্রায় বিরত আছেন ফুচকাপ্রেমীরা।
কারণ, প্রথমত, রাস্তার ধারে ফুচকাওয়ালাদের বসা অনিয়মিত হয়ে পড়েছে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞার ফলে। দ্বিতীয়ত, বসলেও, অনেকেই সুরক্ষাজনিত সতর্কতা অবলম্বন করে যাচ্ছেন না।
আর তাই ভোজনরসিক বাঙালিদের এই জলভরা ফুচকার স্বাদ সুরক্ষার সহ তুলে ধরতে এগিয়ে এলেন খড়দার এই ভাই-বোনের জুটি।
এতদিন, কফি পার্লার থেকে আইসক্রিম পার্লারর নাম অনেকেই শুনেছেন। কিন্তু, দুই ভাইবোন দেবজ্যোতি আর জ্যোতির্ময়ীর হাত ধরে উঠে এল একেবারে ফুচকা-পার্লার-- নাম 'ফুচকাওয়ালা'।
আজ খড়দায় বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে 'ফুচকাওয়ালা'। শুরুটা অবশ্য পুরোটা শখ থেকে নয়, অনেকটা বাধ্যতা থেকেও।
লকডাউনে পেশায় ইঞ্জিনিয়ার ছেলে দেবজ্যোতির চাকরির টাকা অর্ধেক হয়েছে। বিটেক পড়ছে মেয়ে জ্যোতির্ময়ী। লকডাউনে তাঁর পড়াশোনাও প্রায় স্তব্ধ। পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছ্বলতা খুব একটা ভাল নয়। বাবার পক্ষে সম্ভব ছিল না পড়াশোনার খরচ চালানো।
এই পরিস্থিতিতে, সংসারের হাল ফেরাতে উদ্যোগ নেয় দেবজ্যোতি ও জ্যোতির্ময়ী। বাবার পাশে কিভাবে কিভাবে দাঁড়াবেন, কীভাবে নিজেদের একটা পরিচয় তৈরি করবেন সেই নিয়ে চিন্তা করতে থাকেন তাঁরা।
প্রায় ১০ বছর ধরে বন্ধ হয়ে পড়ে ছিল খড়দহ বাজারে পারিবারিক দোকান। সেই জায়গায় কিছু একটা করার ইচ্ছা ছিল তাঁদের। সেটাকে কী করে ব্যবহার করা যায়, ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ তাঁদের ইচ্ছা হয় ফুচকার দোকান দেওয়ার।
যেমন ভাবা তেমন কাজ। দেবজ্যোতি ও জ্যোতির্ময়ী সিদ্ধান্ত নেন, ওই দোকানের জায়গায় ফুচকা পার্লার করবেন তাঁরা। রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফুচকা বিক্রি নয়, একেবারে দোকানের মধ্যে ফুচকা তৈরি করে বিক্রি করা হবে।
যদিও, তাঁদের এই ভাবনায় একেবারেই সহমত পোষণ করেননি বাবা। ছেলেমেয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে ফুচকার দোকান করবে, এমন ইচ্ছাপ্রকাশ করতেই বাবা তো রেগে লাল হয়ে যান।
কিন্তু বাবাকে বুঝিয়ে মানান দেবজ্যোতি ও জ্যোতির্ময়ী। এখন ছেলেমেয়ের সাফল্য এবং তাঁদের ফুচকা খেয়ে এত মানুষের তাঁদের প্রতি ভালোবাসা দেখে বাবা খুশি। গর্বের সঙ্গে এখন তিনি বলছেন, তাঁর ছেলে-মেয়ের ফুচকার দোকান আছে।
সাধারণ ফুচকা তো রয়েছেই, খড়দার 'ফুচকাওয়ালা' পার্লারে পাওয়া যায় বাংলাদেশী ফুচকা থেকে শুরু করে চকোলেট ফুচকা, কোন ফুচকা, চিকেন ফুচকা, টক-ঝাল-মিষ্টি ফুচকা ...ইত্যাদি।
শুধু ঘরের বাসিন্দা নন, দূর-দূরান্তের মানুষ আসছে 'ফুচকাওয়ালা'র কাছে। এখন খড়দার লোকের মুখে মুখে ফিরছে ভাই-বোন ফুচকাওয়ালার নাম।
প্রচারের জন্য সোশ্যাল মিডিয়াকে হাতিয়ার করেছে প্রযুক্তিতে সিদ্ধহস্ত ভাইবোন জুটি। ফেসবুকের মাধ্যমে ফুচকা সমাহার নিয়ে একেবারে সকলের ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছে 'ফুচকাওয়ালা'।
এখানেই শেষ নয়। এখন একেবারে অনলাইন ফুড ডেলিভারির অ্যাপেও হাজির ফুচকাওয়ালা। ফলে, পার্লারে না যেতে পারলেও, ঘরে বসে বসেই অ্যাপের মাধ্যমে সকলের দরজায় পৌঁছে যাচ্ছে 'ফুচকাওয়ালা'।
ফোন খুলে অ্যাপের মধ্যে গিয়ে ফুচকা ওয়ালা লিখলেই একেবারেই আপনার বাড়িতে হাজির হবে ফুচকাওয়ালা-র থেকে বিভিন্ন রকমারি ফুচকা।