কলকাতা: কালবৈশাখীর তাণ্ডবে বিপর্যস্ত কলকাতা। ভেঙে পড়ল গাছ, ভেঙে পড়ল বাড়ি। কলকাতা ও জেলায় মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের। এরমধ্যে কলকাতায় মৃতের সংখ্যা ৪। হাওড়ায় মারা গিয়েছেন ৬ জন। বাঁকুড়া ও হুগলিতে একজন করে মারা গিয়েছেন। ঝড়ে গাছ ভেঙে বেহালার অশোকা সিনেমা হলের কাছে মৃত্যু হয়েছে এক পথচারীর। দিনভর তীব্র গরমের পর সন্ধ্যায় কালো হয়ে আসে শহরের আকাশ। কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হয় ঝড়ের তাণ্ডব। আলিপুর আবহাওয়া দফতর সূত্রে খবর, সন্ধে ৭টা ৪২-এ কলকাতার ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ৮৪ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে যায়। ১৩ মিনিট পর ৭টা ৫৫-য় শহরের ওপর দিয়ে বয়ে যায় ঘণ্টায় ৯৮ কিলোমিটার বেগে ঝড়। ঝড়ের দাপটে বেহালা, দমদম, জোড়াবাগান, শোভাবাজার, সল্টলেক, সাদার্ন অ্যাভিনিউ সহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় ভেঙে পড়ে বহু গাছ। ভেঙে পড়ে রাস্তার বাতিস্তম্ভ। বেহালায় গাছ ভেঙে মৃত্যু হয়েছে এক পথচারীর। বিপর্যস্ত হয়ে যায় শহরের যান চলাচল। লেনিন সরণিতে জ্যোতি সিনেমা হলের কাছে ভেঙে পড়ে একটি বাড়ির একাংশ। মৃত্যু হয় ২ জনের, আহত ৩। বাড়ির একাংশ ভেঙে পড়ে পার্ক সার্কাসেও। আনন্দপুর চৌভাগায় নির্মীয়মান বাড়ির একাংশ ভেঙে পড়ে মৃত্যু হয় মহম্মদ শাহিদ খান নামে এক ব্যক্তির। আহত হন মহম্মদ আরজু নামে আর একজনের। ঝড়ের পর নামে তুমুল বৃষ্টি। বিপর্যস্ত হয়ে যায় শহরের যান চলাচল। বৃষ্টির পর পরিস্থিতি মোকাবিলায় নামেন পুরকর্মীরা। ঝড় ও বৃষ্টি হয়েছে হাওড়া, হুগলি, দুই ২৪ পরগনা, বাঁকুড়া সহ দক্ষিণবঙ্গে বিভিন্ন জেলাতেও। হাওড়া বেলুড় ও ডুমুরজলা ৩, বাঁকড়ার ইন্দাসে ১ মৃত ।
সন্ধের কালবৈশাখীর প্রভাব পড়ে পরিবহণ ব্যবস্থায়। বিপর্যস্ত ট্রাম, ট্রেন, মেট্রো থেকে বিমান চলাচল। ঝড়ের তাণ্ডবে হাওড়া স্টেশনে প্রভাব পড়ে ট্রেন চলাচলে। বিভিন্ন স্টেশনে একাধিক ট্রেন আটকে যাওয়ার পাশাপাশি, ওভার হেড তারে গাছ পড়ে যাওয়ায় হাওড়া-বর্ধমান ও হাওড়া-তারকেশ্বর শাখায় বন্ধ হয়ে যায় ট্রেন চলাচল। চরম দুর্ভোগে পড়েন হাজার হাজার যাত্রী। ঝড়ের দাপটে হাওড়া স্টেশনের ১৯ ও ২০ নম্বর প্ল্যাটফর্মের ওপরের ফ্লাইওভারের রেলিং-এর একাংশ ভেঙে পড়ে। উত্তরপাড়া ও হিন্দমোটরে মোবাইলের দুটি টাওয়ার উপড়ে রাস্তার ওপর পড়লে বিঘ্নিত হয় যানচলাচল। শিয়ালদা থেকেও একাধিক লাইনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে ট্রেন চলাচল। শিয়ালদা-হাসনাবাদ, শিয়ালদা-বনগাঁ শাখায় বন্ধ হয়ে যায় ট্রেন চলাচল। মেইন লাইনের আগড়পাড়া ও টিটাগড়ের কাছে ওভারহেডের তারে গাছ পড়ে থমকে যায় ট্রেন চলাচল। যাত্রীদের ভিড় জমে যায় শিয়ালদা স্টেশনে। রাত আটটা থেকে বন্ধ হয়ে পড়ে শহরের মেট্রো চলাচলও। দমদম ও নোয়াপাড়ায় লাইনের ওপর গাছ ভেঙে পড়ে বিঘ্নিত হয় মেট্রো পরিষেবা। সুড়ঙ্গের মধ্যে আটকে পড়েন যাত্রীরা। কালবেশাখীর তাণ্ডবে ব্যাহত হয় বিমান চলাচলও। কলকাতা থেকে পাটনা, ভুবনেশ্বর, আগরতলা, দিল্লিগামী বিমান দেরিতে ছাড়ে। রাত ৯ টা ১০ থেকে ১০টা ৫০ পর্যন্ত দিল্লিগামী সব বিমান দেরিতে ওড়ে।