হনুমানের কিনা হইল জ্বর, সারিল প্যারাসিটামলে!

ওয়েব ডেস্ক, এবিপি আনন্দ Updated at: 13 Aug 2016 02:46 AM (IST)
NEXT PREV


সেবা-শুশ্রূষা আর প্যারাসিটামল— দলছুট, ক্ষ্যাপা হনুমানকে জোড়া দাওয়াইয়ে বশে এনে ফেলেছেন নানুরের গোপালনগরের বিকাশ ঘোষ।

কী করে?

দিন কয়েক আগের কথা। গ্রামে এসেছিল হনুমানের পাল। তাদের মধ্যে দলছুট হয়ে পড়ে একটি হনুমান। পথে বেরিয়ে যখন-তখন ওই হনুমানের হাতে হেনস্থা হয়েছেন অনেকেই। কখনও দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে তেড়ে আসত, কখনও অকারণেই কারও কারও জুটেছে সপাটে চড়!

এহেন দাপুটে হনুমানকে দিন তিনেক আগে, ভরদুপুরে গাছতলায় মিইয়ে বসে থাকতে দেখে সন্দেহ হয়েছিল বিকাশবাবুর। ব্যাপারটা কি? সাহস করে কয়েক কদম এগিয়ে গিয়েছিলেন। দেখেন, চোখ লাল! আরও একটু সাহস জুটিয়ে গায়ে হাত দিয়ে বুঝেছিলেন— প্রবল জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে শরীর। আগের রাতের বৃষ্টিতে বেমক্কা ভিজেছে যে!

আর আগে-পিছে না ভেবে পাঁজাকোলা করে তুলে এনেছিলেন বাড়িতে। কাপড় দিয়ে যত্ন করে মুছিয়ে দিয়েছিলেন গা। তাতেও কাঁপুনি থামছে না দেখে জড়িয়ে দিয়েছিলেন কম্বল। দেন দু’গ্লাস দুধও। একটু ধাতস্থ হতে দেখে ছুটেছিলেন নানুরের বাসস্ট্যান্ড এলাকার এক ওষুধের দোকানে। বিকাশবাবুর কথায়, ‘‘কী ওষুধ চাইব এই ভেবে তখনও সংশয়ে ছিলাম! তখনই মাথায় এল প্যারাসিটামলের কথা। ওই ওষুধটা খেয়ে আমার বেশ কয়েকবার জ্বর থেকে চাঙ্গা হয়ে উঠেছিলাম। চেয়ে বসলাম ওটাই।’’ তিনি বলে চলেন, ‘‘কিন্তু, ওই ওষুধ খাওয়ালে হনুমানটার কোনও ক্ষতি হবে না তো। তাই ওই দোকানের কর্মীদের ব্যাপারটা খুলেই বললাম। ওরা ভরসা দিলে কিনে নিলাম।’’

সেই প্যারাসিটামল আর যত্নআত্তিতেই বিলকুল বদলে গিয়েছে হনুমানটি। সেই চেনা রগচটা ভাব উধাও! শুক্রবার গিয়ে দেখা গেল— ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের থেকে দিব্য কলাটা, মূলোটা নিয়ে উসরসাৎ করছে সে। চোখ বুজিয়ে নিচ্ছে আদর। বিকাশবাবুর দু’বছরের নাতনি পিয়াসার হাত থেকে আপেল নিয়েও খেল সে। সে সব দেখতে জমছে ভিড়ও। তাতে শুধু শিশু নয়, দেখা গেল এলাকার যুবতী, গৃহবধূদেরও। এঁদেরই এক জনকে বলতে শোনা গেল, ‘‘ওই হনুমানটাই আমাকে চড় মেরেছিল। এখন ওকে দেখলে কে আর সেটা বিশ্বাস করবে!’’

বিকাশবাবুর পশুপ্রেমের নিদর্শন এই প্রথম নয়। গত বছর নবমীর দিনে অসুস্থ হয়ে একটি হনুমানের মৃত্যুর পরে চাঁদা তুলে তার সৎকার করিয়েছিলেন। মাথা মুড়িয়ে সেরেছিলেন পারলৌকিক কাজও। স্ত্রী, দুই ছেলে, এক পুত্রবধূ এবং নাতনিকে নিয়ে ছোট্ট সংসার তাঁর। রয়েছে বিঘে দশেক জমি। তাতেই চলে সংসার। স্ত্রী বিষ্ণুপ্রিয়াদেবী বললেন, ‘‘সে দিন যখন হনুমানটিকে নিয়ে এল তখন ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। এখন আর সে ভয় নেই।’’

তিন দিনেই হনুমানটার উপরে সকলের কেমন মায়া পড়ে গিয়েছে। কেননা, তাকে তো শেষমেষ বন দফতরের হাতেই তুলে দিতে হবে। ইতিমধ্যেই বন দফতরকে হনুমানটির কথা জানিয়েছেন বিকাশবাবু। বোলপুরের রেঞ্জার নির্মলচন্দ্র বৈদ্য সে কথা মেনেছেন। তিনি বলেন, ‘‘বিকাশবাবুকেই গাড়ি ভাড়া হনুমানটি পৌঁছে দিতে বলা হয়েছে। সেক্ষেত্রে গাড়ি ভাড়ার টাকা দিয়ে দেওয়া হবে। কারণ বন দফতরের কর্মীরা আনতে গেলে উল্টো বিপত্তি হতে পারে। হনুমানটি পালিয়েও যেতে পারে।’’

কিন্তু শেষে কিনা হনুমানের জ্বর সারল প্যারাসিটামলে?

এতে অবাক হওয়ার কিছু দেখছেন না সিউড়ি ১ ব্লকের ভেটনারি অফিসার শুভেন্দু মণ্ডল। তিনি জানাচ্ছেন, কুকুর-বেড়াল বাদ দিয়ে হনুমান, বাঁদরের মতো সব প্রাণীকেই প্যারাসিটামল দেওয়া যেতে পারে। তাতে জ্বরও সারে।

তবে হ্যাঁ, রোগীভেদে ওষুধের মাত্রাভেদ রয়েছে।

- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -

© Copyright@2024.ABP Network Private Limited. All rights reserved.