সুদীপ চক্রবর্তী, রায়গঞ্জ (উত্তর দিনাজপুর): আর্থিক অবস্থা বিশেষ ভাল নয়, কিন্তু তার জন্য দমে যায়নি ভ্রমণ পিপাসু মন। কোনও কিছুই আটকাতে পারেনা বাঙালির ঘুরে বেড়ানোর অদম্য ইচ্ছা ও মনোবলকে। আর সেই ইচ্ছাশক্তি ও মনের জোরে ভর করেই অনন্য নজির গড়ে তুলেছেন দক্ষিণ কলকাতার চেতলার বাসিন্দা পরিমল কাঞ্জি, যিনি পেশায় একজন গ্যাস ওভেন সারাইয়ের মিস্ত্রি। পঞ্চান্ন বছর বয়সী পরিমলের কীর্তি শুনলে চোখ কপালে উঠবে। অসম্ভবকে সম্ভব করে তাঁর বহু পুরনো সাইকেলকে সঙ্গী করে ভারত ভ্রমণ করেছেন পরিমল। এই সাইকেলে চেপেই কলকাতা থেকে যাত্রা শুরু করেন। এরপর একে একে ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কেরল, জম্মু-কাশ্মীর সহ মোট ১৩টি রাজ্য ঘুরে নেপাল পৌঁছন তিনি। এরপর সেখান থেকে মঙ্গলবার ফেরার পথে এসে পৌঁছন উত্তরবঙ্গের রায়গঞ্জ শহরে। সেখানে এসে পৌঁছতেই পরিমল কাঞ্জিকে সম্বর্ধনা জানান রায়গঞ্জের বাসিন্দারা এবং হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা।


অচেনাকে চেনা, অজানা জানা, অদেখাকে দেখার অদম্য ইচ্ছা প্রায় প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই থাকে। হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দেওয়ার দৌড়ে বাঙালিদের অবদান নেহাত কম নেই। তবে আর্থিক অনটনের কারণে এই ইচ্ছা মনের মধ্যেই পুষে রাখেন অনেকে। তবে হার মানেননি চেতলা এলাকার বাসিন্দা পরিমল কাঞ্জি। স্টোভ, গ্যাস ওভেন, প্রেশার কুকার সারাইয়ের ছোট্ট দোকান চালান তিনি। কাজের জন্য প্রায়ই নিজের পুরনো সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন। তবে বৃহত্তর জগতকে চাক্ষুষ করার ইচ্ছা চিরকালই ছিল। শেষ পর্যন্ত মনকে আর আটকাতে না পেরে সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললেন। আরামে সফর করার সাধ্য না থাকুক, সঙ্গী সাইকেল তো আছেই। সঙ্গে নিলেন কিছু জামাকাপড়, শুকনো খাবার আর বন্ধুর দেওয়া সামান্য হাত খরচের টাকা। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসেই যাত্রা শুরু করেন কলকাতা থেকে। এরপর ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কেরল, কর্নাটক, গোয়া, মহারাষ্ট্র, গুজরাত, রাজস্থান, পঞ্জাব, জম্মু-কাশ্মীর, শ্রীনগর হয়ে পৌঁছন লাদাখে। এরপর নেপাল হয়ে কলকাতা ফেরার পথে থামেন রায়গঞ্জে। 


পরিমল বাবু রায়গঞ্জ শহরে পৌঁছতেই তাঁকে সম্বর্ধনা জানান তাঁর অনুরাগীরা। শঙ্কর ধর নামে এক পর্বতারোহী ও হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যের কথায়, 'পরিমল বাবু বাংলার গর্ব। কী পরিমাণ ইচ্ছাশক্তি থাকলে সাইকেলে চেপে ভারত ভ্রমণের সাহস দেখানো যায় তা পরিমল বাবুর কাছ থেকেই শিখতে পেরেছি। তিনিই আমাদের অনুপ্রেরণা।'


কী বলছেন পরিমল কাঞ্জি নিজে? তাঁর কথায়, 'চলার পথে বহু মানুষের সহযোগিতা পেয়েছি। এবার কলকাতায় ফিরে সাময়িক বিরতি, তারপর আবার বেরিয়ে পড়ব অন্যান্য জায়গাগুলির উদ্দেশে।' সমতল রাস্তায় দিনে একশো আশি কিলোমিটার আর পাহাড়ি অঞ্চলে দিনে ষাট কিলোমিটার সাইকেল চালিয়েও কখনও ক্লান্ত বোধ করেননি তিনি। বরং বদ্ধ ঘরের বাইরের জগৎটাকে দেখার ইচ্ছা তাঁর তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে। ইতিমধ্য়েই নিজের কাজের মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়ায় সাড়া ফেলেছেন তিনি। অ্যাডভেঞ্চার প্রেমীরা তাঁকে কুর্ণিশ জানাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। পরিমল কাঞ্জির মতে, 'এসব নিয়েই তো জীবন।'