রণক্ষেত্র পরিস্থিতির এক সপ্তাহ পর অবশেষে ভাঙড়ের গ্রামে গ্রামে পা রাখল পুলিশবাহিনী।
এক সপ্তাহ আগেও, লাঠিসোটা নিয়ে, গুঁড়ি ফেলে, রাস্তা কেটে যে পুলিশকে আটকেছিল ভাঙড়বাসী....সেই পুলিশই বুধবার বিনা বাধায় রুট মার্চ করল ভাঙড়ের রাস্তায়...লোকজন দেখল...চুপ করে থাকল...কেউ কেউ তো স্বস্তির নিশ্বাসও ফেলল! থমথমে পরিস্থিতির মাঝেই পুলিশ দিনভর শান্তির বার্তা ছড়ৃনোর চেষ্টা করল।
মঙ্গলবার বিকেলেই রাজারহাট-নিউটাউনের তৃণমূল বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত ভাঙড়ে ঢুকে রাস্তা থেকে গাছের গুঁড়ি সরিয়ে দেন।
পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, প্রশাসনের সামনে ভাঙড়ে ঢোকার রাস্তা কার্যত তৈরি হয়ে যায় এরপরই। দেরি না করে বুধবার সকালেই কাশীপুর থানায়ে ডেকে পাঠানো হয় পুলিশ, RAF, কমব্যাট ফোর্স এবং রোবোকপের বিশাল বাহিনীকে। সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে চারশো জন।
সকাল দশটা নাগাদ তারা দু’টি দলে ভাগ হয়ে ভাঙড়ের দিকে রওনা দেয়।
একদল ঢোকে কাশীপুর হয়ে।
পুলিশের অন্য দল পোলেরহাট বাজার হয়ে বকডোবার দিক দিয়ে।
যে পাওয়ার গ্রিড প্রকল্প নিয়ে ১৭ তারিখ ভাঙড় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, তার সামনে পৌঁছে দাঁড়িয়ে যায় বাহিনী। বাহিনীর উদ্দেশে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন অফিসাররা।
এখান থেকে পুলিশ, RAF এবং কমব্যাট ফোর্সের জওয়ানরা ভাঙড়ের ভিতরে মাছিভাঙা, খামারআইট, শ্যামনগরের মতো গ্রামে চলে যান, যেখানে অশান্তির আঁচ সবথেকে বেশি ছড়িয়েছে।
এক সপ্তাহ আগে এই ভাঙড়েই একের পর এক পুলিশের গাড়ি জ্বালিয়েছিল গ্রামবাসীরা, গাড়ি ফেলে দিয়েছিল জলে।
মঙ্গলবার তৃণমূল বিধায়কের সামনেই সেইসব গাড়ি সরানোর কাজ শুরু হয়েছিল।
আর বুধবার হাত লাগাল পুলিশ নিজেই। শ্যামনগরের কাছে জলাশয়ে একটি পুলিশের গাড়ি বুধবার সকাল পর্যন্ত পড়েছিল। বাহিনীর তত্ত্বাবধানে সেটিকে তোলা হয়।
এদিন পুলিশ ঢোকার পরও গ্রামবাসীদের কারও মধ্যে কোনও বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। উল্টে অনেকের চোখে মুখে ছিল স্বস্তির ছাপ।
এদিকে, ভাঙড় ইস্যুতে ভাঙড় সংহতি মঞ্চ নামে একটি সংগঠন তৈরি করেছে বিদ্বজ্জনদের একাংশ। বুধবার তাদের সভায় উপস্থিত ছিলেন সুজন চক্রবর্তী, প্রাক্তন মুখ্যসচিব অর্ধেন্দু সেন। উপস্থিত না থাকলেও, লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় একটি বিবৃতি লিখে পাঠান।
এদিনই ভাঙড়ে গুলিতে নিহত মফিজুলের খানের পরিবারের তরফে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিতে হাইকোর্টে মামলা করা হয়।
মঙ্গলবার বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর এজলাসে এই মামলার শুনানি হতে পারে।