সুদীপ চক্রবর্তী, রায়গঞ্জ: তাঁর ব্যপ্তি তিনি নিজেই। করোনা আবহ রাজ্যজুড়ে বাধ সেধেছে রবীন্দ্রজয়ন্তীর জমকালো পালনে। কিন্তু তাতে কী! কবিগুরু নিজেই পৌঁছে গেলেন হাসপাতালে থাকা কোভিড আক্রান্তদের মাঝে। রায়গঞ্জের মিক্কিমেঘা কোভিড হাসপাতালে রবিবার সন্ধ্যায় পালন করা হল কবিগুরুর ১৬০ তম জন্মজয়ন্তী।


মারণ ভাইরাসে আক্রান্তরা হতাশার সব রেশ ঝেড়ে ফেলে মেতে উঠলেন রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী পালনের আনন্দে। গলা ছেড়ে গেয়ে উঠলেন "প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে"। কেউ আবার সুর ধরলেন "গ্রাম ছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ''-এর। কবিগুরুর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান ও পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করার পাশাপাশি কোভিড সংক্রামিতরাই গাইলেন গান। রবীন্দ্র জয়ন্তী পালনে তাদের সঙ্গ দিলেন চিকিৎসক, নার্স ও সর্বস্তরের স্বাস্থ্যকর্মীরা। অনুষ্ঠান শেষে সকলকে করানো হল মিষ্টিমুখও।


রায়গঞ্জ শহর থেকে বেশ কিছুটা দূরে রাজ্য সড়কের ধারে মিক্কিমেঘা কোভিড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এই উদ্যোগে খুশির রেশ করোনা সংক্রমিতদের মধ্যে। হতাশা, নিঃসঙ্গতা, আতঙ্ক কাটানোর পাশাপাশি বাঙালির বিশেষ দিনে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তাদের সমাজদের মূলস্রোতের সঙ্গে একাত্ম করে রাখা চেষ্টাতেই এই উদ্যোগ।


হাসপাতালের নার্সিং ইনচার্জ বাপী বিশ্বাস বলেছেন, 'হাসপাতালের কর্মীরা প্রত্যেক বছরই কোনও স্কুল বা কলেজ গিয়ে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করে থাকি। কিন্তু এবারে পরিস্থিতির ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত। আর স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে যতই পরিষেবা আমরা দিই না কেন মানসিকভাবে কোভিড সংক্রমিতরা কিছুটা নিঃসঙ্গ বোধ করেন যেহেতু তাদের একা থাকতে হয়, তাই জন্যই তাদের সঙ্গে এই উৎসবপালনে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করা হল আপনারা সবাই আমাদের সঙ্গে একইরকমভাবেই রয়েছেন।'


এদিকে, কোভিড আক্রান্তদের মানসিকভাবে তরতাজা রাখতে অভিনব মিউজিক থেরাপির উদ্যোগ নিয়েছে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। যেখানে তাই স্টেথো ছেড়ে হাতে গিটার তুললেন ডাক্তার। গলা মেলালেন সুপারও।


কোভিডের সংক্রমিত হওয়া মানেই তাঁরা কোনও বিচ্ছিন্ন দ্বীপের বাসিন্দা নন, বরং একইভাবে একরইরমভাবে সবার সঙ্গে একাত্ম হয়েই রয়েছেন এই বার্তকাই যেন কঠিন সময়ে দেওয়ার চেষ্টা এই সমস্ত উদ্যোগে। আর সেই যোগসূত্রই যেন গড়ে দিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।