অরিন্দম সেন, আলিপুরদুয়ার: রেলের জমিতে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের পাট্টা বিলির ঘোষণা নিয়ে আগেই বেঁধেছিল সংঘাত। এবার সেই পাট্টা দেওয়া নিয়ে রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের দ্বারস্ত হয়েছে বলে জানাল রেল। বেআইনি উচ্ছেদ হটাতে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগেও সরব রেল। তবে বিষয়টিকে কোনওরকম গুরুত্ব দিতে নারাজ আলিপুরদুয়ারের তৃণমূল বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তী। তাঁর দাবি, আইন জানে না রেল। আবারও রেল কলোনির বাসিন্দাদের পাট্টা দেওয়া হবে বলে দাবি করেছেন তিনি।


আলিপুরদুয়ারে গত কয়েক বছর ধরেই বিভিন্ন উদ্বাস্তু কলোনির বাসিন্দাদের প্রশাসনিকভাবে পাট্টা প্রদান করার কাজ চলছে। আলিপুরদুয়ার শহর লাগোয়া জংশন এলাকায় একাধিক রেল কলোনিতেও বহু মানুষ বাস করেন। কিন্তু হঠাৎই গত ৩০ অক্টোবর লক্ষ্মীপুজোর দিন দীপাবলির শুভেচ্ছাবার্তায় আলিপুরদুয়ারের তৃণমূল বিধায়ক দাবি করেছিলেন, রেলের জমিতে বসবাসকারীদেরও পাট্টা দেওয়া হবে। যা সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ায় অস্বস্তিতে পড়ে রেল কর্তৃপক্ষ। এই বক্তব্যকে ‘বিভ্রান্তিকর’ বলে দাবি করে গত ৯-ই নভেম্বর প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের আলিপুরদুয়ার জংশন ডিভিশন। সেই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আলিপুরদুয়ারের বিধায়কের বক্তব্যের নিন্দাও করা হয়।

সেখান থেকেই শুরু হয় রেলের সাথে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়কের লড়াই। এরপরেও বিধায়ক তাঁর নিজের বক্তব্যেই অনড় থাকেন। অভিযোগ, এরপর এ বছরের ৯ জানুয়ারি আলিপুরদুয়ারের রবীন্দ্র ভবনে জেলা প্রশাসনের তরফে উদ্বাস্তু কলোনির বাসিন্দাদের পাট্টা বিলি করার পাশাপাশি দমনপুর এলাকায় রেলের জমিতে বসবাসকারীদের হাতেও তুলে দেওয়া হয় জমির পাট্টা। আর তারপরেই রেলের তরফে কলকাতা হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চে রিট পিটিশন জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। আইনি প্রক্রিয়ার পাশাপাশি রেলের জমিতে বসবাসকারীদের উচ্ছেদের নোটিস দেওয়া হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে।

রেলের আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের সিনিয়র ইঞ্জিনিয়র পীযূষ পান্ডে জানিয়েছেন, ‘রেলের জমি শূন্য খতিয়ানের হয়। রেলের এনওসি ছাড়া সেই খতিয়ানের জমি দেওয়ার ক্ষমতা রাজ্যের নেই। তারপরেও রাজ্য সরকার আলিপুরদুয়ারের দমনপুর এবং জলপাইগুড়ির নিউ মালে কিছু জমি দিয়েছে। সেটা নিয়ে রেলের তরফে  হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চে রিট পিটিশন জমা দেওয়া হয়েছে।’

পীযূষ আরও জানিয়েছেন, ‘রেলের জমিতে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের উচ্ছেদের নোটিস রুটিনমাফিকই দেওয়া হয়ে থাকে। যদি রাজ্য সরকারের তরফে রাজ্য পুলিশ দিয়ে সহযোগিতা করা হত, তাহলে দখলদারদের উচ্ছেদ করতে সক্ষম হতাম আমরা। অসহযোগিতার কারণেই উচ্ছেদ করতে পারছি না। যদি বলপূর্বক উচ্ছেদের চেষ্টা করা হয়, তাহলে আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা হবে। তাই আইনি পথেই যেতে হচ্ছে আমাদের।’

এ বিষয়ে আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের ডিআরএম কানভের সাই জৈন বলেছেন, ‘রেলের জমিতে কেউ পাট্টা দিতে পারে না। এর নিয়ম নেই। সেই কারণেই আমরা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছি।’

যদিও রেল কর্তৃপক্ষের বক্তব্যকে গুরুত্ব না দিয়ে তৃণমূল বিধায়কের দাবি, ‘ওঁরা আইন জানেন না। আমরা আবারও পাট্টা দিতে চলেছি।’