কলকাতা: শিয়ালদা দক্ষিণ শাখার মল্লিকপুর স্টেশন রেল অবরোধ ঘিরে ধুন্ধুমার। গতকাল সোনারপুর স্টেশনে স্পেশ্যাল ট্রেনে উঠতে দেওয়া ও লোকাল ট্রেন পরিষেবা ফের শুরু করার দাবিতে সোনারপুর স্টেশনে অবরোধ হয়েছিল। এদিনও সোনারপুরে একই দাবিতে অবরোধ শুরু হয়। কিন্তু এক ঘণ্টা পর সেই অবরোধ উঠলেও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে একাধিক স্টেশনে। মল্লিকপুরে পরিস্থিতি রীতিমতো অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যকে ফের চিঠি দিতে চলেছে রেল কর্তৃপক্ষ। সূত্রের খবর, চিঠিতে বলা হয়েছে, স্টাফ স্পেশাল ট্রেনে এত যাত্রী পরিবহণ সম্ভব নয়। আইনশৃঙ্খলাজনিত সমস্যা বাড়ছে। লোকাল ট্রেনের পরিষেবা স্বাভাবিক না হলে সমস্যা আরও বাড়বে। এই আবেদন জানিয়ে রাজ্যকে ফের চিঠি দিতে চলেছে রেল।
এদিন অবিলম্বে লোকাল ট্রেন চালানোর দাবিতে রেল অবরোধ ঘিরে বারুইপুর শাখার মল্লিকপুর স্টেশনে ধুন্ধুমার বেধে যায়। দফায় দফায় চলে অবরোধ। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টিও করা হয়। পালাতে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে রেললাইনের উপর পড়েও যান পুলিশকর্মী। জিআরপি-র গাড়ি ভাঙচুর করে উত্তেজিত জনতা। জিআরপি ওসি-সহ পুলিশ কর্মীদের ধাওয়া করে এলাকাছাড়া করে অবরোধকারীরা। গণ্ডগোলে বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মী আহত হন।ক্যানিং শাখার পিয়ালি স্টেশনে নতুন করে শুরু হয় অবরোধ। এদিন ঘটনার সূত্রপাত হয় সোনারপুর স্টেশনে। গতকালের পর আজ ফের লোকাল ট্রেন চালানোর দাবিতে সোনারপুর স্টেশনে সকাল ৭টা থেকে রেল অবরোধ শুরু হয়। আটকে পড়ে আপ ক্যানিং লোকাল স্টাফ স্পেশাল। পুলিশের সঙ্গে তর্কাতর্কি বেধে যায় অবরোধকারীদের। একঘণ্টা পর লাঠি উঁচিয়ে অবরোধ তুলে দেয় পুলিশ।গতকালও লোকাল চালুর দাবিতে ৪ ঘণ্টা ধরে অবরোধ চলে সোনারপুর স্টেশনে।
উল্লেখ্য,  করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ মোকাবিলায় রাজ্যে বিধিনিষেধ জারি হয়েছে। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বিধিনিষেধে  কিছু ছাড় মিললেও  বন্ধ সর্ব সাধারণযাত্রীদের জন্য বাস, মেট্রো ও লোকাল ট্রেন পরিষেবা। স্পেশ্যাল ট্রেনগুলিতে রেলের কর্মীরা ছাড়াও জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্তদের ওঠার অনুমতি রয়েছে। 
লোকাল ট্রেন চালু নিয়ে কী ভাবনাচিন্তা করছে সরকার? রাজ্যকে চিঠি দিয়ে কিছুদিন আগেই জানতে চেয়েছিল পূর্ব রেল ও দক্ষিণ-পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ।
চিঠিতে জানতে চাওয়া হয়েছিল, লোকাল ট্রেন চালু করার ব্যাপারে কী ভাবছে সরকার? পাশাপাশি চিঠিতে লেখা হয়েছে, স্টাফ স্পেশাল ট্রেনে বাড়ছে ভিড়। করোনা আবহে ভিড় কমাতে আরও ট্রেন চালানো প্রয়োজন। 
পূর্ব রেল সূত্রে খবর, বন্ধ হওয়ার সময় শিয়ালদা ডিভিশনে প্রতিদিন ৮৮২টি লোকাল ট্রেন চলত। এখন চলছে ১৮০টি।ফলে অফিস টাইমের ট্রেনে ভিড় বাড়ছে। উপেক্ষিত হচ্ছে করোনা বিধি।
গত বছর, ২৩ মার্চ থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত, দীর্ঘ ৯ মাস বন্ধ ছিল ট্রেন পরিষেবা।
সংক্রমণ কমার পর গত ১১ নভেম্বরে ফের ট্র্যাকে ফেরে লোকাল ট্রেন। কিন্তু, করোনার সেকেন্ড ওয়েভে পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠায় ফের ৫ মে থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয় সব লোকাল।
স্পেশ্যাল ট্রেনগুলি মূলত রেলের কর্মীদের যাতায়াতের জন্য ব্যবহৃত হলেও পরে স্বাস্থ্য কর্মী ও ব্যাঙ্ক কর্মীদের মতো জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্তদের যাতায়াতের সুবিধা দেওয়া হয়। 
গত বছর দেশব্যাপী লকডাউন চলার সময়ও বিভিন্ন স্টেশনে স্পেশ্যাল ট্রেনগুলিতে উঠতে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ দেখা গিয়েছিল।