বেগুনকোদর: বেগুনকোদর স্টেশনে ভূতের উপদ্রবের কোনও সত্যতা নেই বলে জানালেন যুক্তিবাদীরা।   পুরুলিয়ায় অযোধ্যা পাহাড় ঘেঁষা ছোট্ট স্টেশন বেগুনকোদর। এতদিন 'ভূতুড়ে' স্টেশন হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছিল এই স্টেশন। সেই ১৯৬৭ থেকে। ওই বছর এক রাতে রেল লাইন ধরে সাদা পোশাক পরা একজন মহিলাকে হেঁটে যেতে দেখে স্টেশন মাস্টার মারা গিয়েছিলেন বলে খবর ছড়িয়ে পড়েছিল। ওই মহিলা কয়েক বছর আগে আত্মহত্যা করেছিলেন বলে দাবি। এরপর থেকেই যাত্রীরা স্টেশনটি এড়িয়ে চলতে শুরু করেন। 'ভূতুড়ে' তকমা সেঁটে যায় বেগুনকোদর স্টেশনের সঙ্গে। রেলওয়ের রেকর্ডেও এই তকমা পায় স্টেশনটি।
তারপর থেকে ৪২ বছর ধরে বন্ধ ছিল স্টেশনটি। ২০০৯-এ তত্কালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্টেশনটি ফের চালু করেন। তবে ভূতের ভয় যাত্রীদের পিছু ছাড়েনি। বিকেল পাঁচটার পরই এই স্টেশনে আর যাতাযাত আর করেন না যাত্রীরা।
ভৌতিক উপদ্রবের ভয়েই যাত্রীরা বগুনকোদরকে এড়িয়ে চলেন।
এবার সেই 'ভূতুড়ে' স্টেশনে গিয়েই একটা রাত কাটিয়ে এলেন যুক্তিবাদীদের ৯ সদস্যের একটি দল। যুক্তিবাদী সংগঠন পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের ওই নয় সদস্য জানার চেষ্টা করলেন, বেগুন কোদরের ওই ভূতুড়ে তকমার কারণ। টর্চ, ডিজিটাল কম্পাস, ক্যামেরা হাতিয়ার করে তাঁরা ফাঁস করলেন ভৌতিক উপদ্রবের নামে আসল ঘটনার কথা। তাঁদের প্রহরায় ছিল পুলিশ।
যুক্তিবাদী দলের নেতৃত্বে ছিলেন নয়ন মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, গত বৃহস্পতিবার রাত ১১ টা থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত তাঁরা ওই স্টেশনে ছিলেন। কিন্তু কোনও আধিভৌতিক ঘটনা তাঁরা দেখতে পাননি। তাঁরা চোখে কোনও মহিলা বা স্টেশন মাস্টারের ভূত দেখতে পাননি। নয়ন মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, শুধুমাত্র স্টেশন সংলগ্ন কুয়োয় একটি সাপ দেখতে পান তাঁরা।
সেই রাতেই স্টেশন ভবনের পিছন থেকে বিকট শব্দ শুনতে পান যুক্তিবাদী দলের সদস্যরা। সঙ্গে সঙ্গে শব্দ লক্ষ্য করে ছুটে যান তাঁরা। আশেপাশের ঝোপঝাড়ে টর্চের আলো ফেলে রাত দুটো নাগাদ চার-পাঁচজন লোককে দেখতে পান তাঁরা। ওই লোকগুলি ভুত নয়, স্থানীয় বাসিন্দা বলেই মনে হয়েছে যুক্তিবাদী দলের সদস্যদের। টর্চের আলো দেখতে পেয়েই পিঠটান দেন তাঁরা। তাঁদের তাড়াও করা হয়। কিন্তু কিছু দূর গিয়ে অন্ধকারে মিলিয়ে যান ওই ব্যক্তিরা।
নয়ন বলেছেন, কিছু লোক ওই স্টেশনটি সম্বন্ধে কৌতুহল যাতে বজায় থাকে সেজন্য সচেষ্ট। কারণ, এর ফলে অনেকেই আগ্রহী হয়ে এখানে আসতেন এবং বিকট আওয়াজ করে তাঁদের তাড়িয়ে তাঁদের জিনিসপত্র হাতিয়ে নেওয়ার মতলবেই এই চেষ্টা বলে মনে করেন তিনি।
স্টেশন চত্বরে রাখা ডিজিটাল কম্পাস ও ক্যামেরায় অস্বাভাবিক কিছুই ধরা পড়েনি।
পুরুলিয়ার জেলা পুলিশ সুপার জয় বিশ্বাস জানিয়েছেন, যুক্তিবাদী দলের সদস্যরা সুরক্ষা চেয়েছিলেন। তাঁদের তা দেওয়া হয়। তিনি আরও বলেছেন, বেগুনকোদর স্টেশনের ভৌতিক তকমা সম্পর্কে অবগত পুলিশ ও প্রশাসন। সম্প্রতি ওই এলাকায় টহলদারি শুরু করেছে পুলিশ। জনগনের মধ্যেও সচেতনতা গড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে।