পূর্ব মেদিনীপুর: এবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সভাপতির পদ থেকেও সরানো হল শিশির অধিকারীকে। নতুন সভাপতি হলেন সৌমেন মহাপাত্র। তৃণমূলের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার চেয়ারম্যান পদে আনা হল শিশির অধিকারীকে। গতকাল দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরানো হয় তাঁকে। এপ্রসঙ্গে কাঁথির তৃণমূল সাংসদের প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
তবে, শুভেন্দু তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমি চাই আমার বাবা-মা সুস্থ থাকুক।আমি কী রাজনীতি করব সেটা যেমন আমার বাব-মা বলেনা, তেমনই আমার বাবা-মা কী রাজনীতি করবে, তা নিয়েও আমি মন্তব্য করি না। এরসঙ্গেই বিজেপি নেতা যোগ করেন, আমি ওই প্রাইভেট লিমিটেড পার্টি সম্পর্কে কিছুই বলব না। ওরা কর্মচারী খোঁজে। যাঁরা থাকতে চান, তাঁরা থাকেন। যাঁরা চান না, তাঁরা বেরিয়ে আসেন।
অন্যদিকে, সৌমেন্দুু বলেন, শিশিরবাবু চেয়ারম্যান ও সভাপতি ছিলেন। এখনও চেয়ারম্যান আছেন। দল আমাকে সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছে। আমি সেই দায়িত্ব পালন করব। আমি শিশিরবাবুর পরামর্শমতো দলকে সমৃদ্ধ করব। সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করব।
এর আগে, গতকাল দিঘা শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ বা ডিএসডিএ-র চেয়ারম্যান পদ থেকে তাঁকে সরানো হয়। তাঁর জায়গায় বসানো হয়েছে জেলা তৃণমূল বিধায়ক অখিল গিরিকে।
২০১২ থেকে ডিএসডিএ-র চেয়ারম্যান ছিলেন শিশির অধিকারী। ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন অখিল গিরি। এখন অখিল গিরি চেয়ারম্যান হওয়ার পর ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়েছে তরুণ জানাকে। যিনি অখিল গিরির ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত।
শুভেন্দু ও সৌমেন্দু বিজেপিতে যাওয়ার পর এই রদবদল ঘিরে প্রশ্ন উঠছে, অখিল গিরিকে গুরুত্ব দিয়ে কি অধিকারী পরিবারকেই বার্তা দিল তৃণমূল সরকার? এপ্রসঙ্গে অখিল গিরি বলেছেন, সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমাকে বসানো হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে শিশিরবাবু পর্ষদে যাচ্ছিলেন না, কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছিল।
শিশির অধিকারী গতকাল এনিয়ে কোনও মন্তব্য না করলেও, তাঁর কথায় ধরা পড়েছে বিরক্তির সুর। বলেছেন, কিছু জানি না। আপনাদের কাছে শুনলাম। কেন এনেছিল, কেন সরাল জানি না। কাউকে ফোনও করব না।
এদিকে, পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, শিশিরদার বয়স হয়েছে, শারীরিক সমস্যা বেরোতে পারেন না, যেহেতু দিঘা শঙ্করপুর ট্যুরিস্টস্পট, তাই কম বয়সীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, শিশিরদার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা আছে, ছেলে আদর্শচ্যুত হলেও শিশিরদা আদর্শচ্যুত হবেন না। বয়সের কারণে আডবাণী জোশীদেরও তো সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
এনিয়ে তৃণমূলকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। বলেন, যারা সরিয়েছে, তারাই সরে যাবে। কাঁথির শান্তিকুঞ্জে এখন তৃণমূল-বিজেপির স্কোর দুই-দুই। শুভেন্দু অধিকারী ও তাঁর এক ভাই সৌমেন্দু বিজেপিতে। শিশির অধিকারী ও শুভেন্দুর আরেক ভাই দিব্যেন্দু তৃণমূলে।
তবে শুভেন্দু বিজেপিতে যাওয়ার পর পূর্ব মেদিনীপুরে তৃণমূলের কোনও কর্মসূচিতে দেখা যায়নি শিশির অধিকারীকে। গতকাল DSDA-র চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণের পর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য শোনা গেছে তাঁর মুখে। তাঁকে যখন বলা করা হয়, আপনি তো তৃণমূলেই আছেন। জবাবে শিশির বলেন, লোকে তাই বলে। পরের জবাব আরও গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, দলে আপনার অবস্থান কী? উত্তরে প্রবীণ নেতা বলেন, বেঁচে আছি!
এই ইস্যুতে তৃণমূলের অন্দরের ফাটল আরও চওড়া করার সুযোগ হাতছাড়া করেনি বিজেপি। রাহুল সিনহা বলেন, বিনাশকালে বিপরীত বুদ্ধি, ধ্বংস হওয়ার কাজ শুরু হয়ে গেছে, এই সিদ্ধান্ত দলকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবে. বিজেপি কোনও কোম্পানি নয়। এখানে দরজা সব সময় খোলা।