কলকাতা: অতিরিক্ত চাপই কি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের হার্ট অ্যাটাকের কারণ? এই বিষয়ে সম্প্রতি সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্যের মন্তব্য জল্পনা উস্কে দিয়েছিল।


সম্প্রতি রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং অমিত শাহর সঙ্গে একমঞ্চে থাকার পর সৌরভকে নিয়ে জল্পনা জোরাল হয়। যদিও, বিজেপি-তৃণমূলের দাবি করা হয়, তাঁদের তরফে কোনও চাপ দেওয়া হয়নি।


এর মধ্যেই নতুন ইন্ধন জোগালেন বিজেপির সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অরবিন্দ মেনন। এদিন কাটোয়ায় চা-চক্রে যোগ গিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করলেন তিনি। বললেন, "সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের উপর কোনও চাপ নেই। উনি বাংলার বাঘ। আমাদের দলে এলে কার্পেট পেতে ফুল দিয়ে স্বাগত জানাব।"


১৬ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে শাসন করেছেন তিনি। ২২ গজের দাঁড়িয়ে, যে কোনও চাপের মোকাবিলা করেছেন তিনি। আর সেই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়েরই কী এমন হল, যে মাত্র ৪৮ বছর বয়সে, তিনি হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়লেন?


বিশেষ কোনও মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি? বিশেষ কোনও চাপ তৈরি করা হচ্ছিল তাঁর উপর? নানা মহলে ওঠা এই প্রশ্নের মদ্যেই জল্পনা উস্কে দিয়েছেন সৌরভের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত অশোক ভট্টাচার্য।


বলেন, সৌরভ অন্য জগতের মানুষ। সেখানে প্রিয় হয়ে থাকবে। হঠাৎ কেউ কেউ মনে করছে, তাঁকে ব্যবহার করে স্বার্থসিদ্ধি করা যাবে। কেউ কেউ ওকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক লাভ পেতে চাইছিল। এরকম যারা করছে, প্রেসার হয়, কাম্য নয়। এই মুহূর্তে কেউ যেন চাপ না দেয়।


সম্প্রতি সৌরভের সঙ্গে কথা বলার পর ফেসবুক পোস্টে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে অশোক ভট্টাচার্য লেখেন, রাজনীতি নিয়ে ওর সঙ্গে কথা হয়েছে। আমার মতে ওর রাজনীতিতে যুক্ত না হওয়াই ভাল।


শেষবার বাংলায় এসে বিজেপির সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী নিয়ে জল্পনা আরও উস্কে দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বলেন, মমতাকে হারানোর জন্য বাংলার ভূমিপুত্ররাই যথেষ্ট, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী বাংলা থেকেই হবেন। এই পরিস্থিতিতে গত ২৭ সেপ্টেম্বর হঠাত্‍ই রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাত্‍ করেন বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট। পরের দিনই দিল্লিতে একটা অনুষ্ঠানে অমিত শাহর সঙ্গে দেখা যায় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে।


দিল্লির ফিরোজ-শা কোটলা স্টেডিয়ামের বাইরে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী তথা বিজেপির অন্যতম শীর্ষ নেতা অরুণ জেটলির একটি মূর্তি স্থাপন করা হয়। আর সেই অনুষ্ঠানে বোর্ড প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন অমিত শাহ। এই ছবিই গুঞ্জন আরও উস্কে দেয়।


প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, চাপ ছিল। বাংলায় রাজনীতির কারবারিরা তাঁকে নিয়ে কারবার করছে। আগে তৃণমূল এখন বিজেপি। আমরা চাই তিনি ক্রিকেটের মহানায়ক হয়ে থাকুন।


একদিকে অমিত শাহর সঙ্গে ফিরোজ শাহ কোটলার অনুষ্ঠানে উপস্থিতি, অন্যদিকে রাজভবনে গিয়ে জগদীপ ধনকড়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ।


যা ঘিরে সৌরভের ভবিষ্যত পদক্ষেপ নিয়ে কৌতুহলী হয়ে ওঠে বাংলা তথা গোটা দেশ। যদিও, বিজেপি এবং তৃণমূলের দাবি তাঁদের তরফে কারও উপর চাপ দেওয়া হয়নি। বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বললেন, যারা রাজনীতি দেখছেন, তাদের বুদ্ধির বিকৃতি। তৃণমূল নেতা ও বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, আমাদের দলের পক্ষ থেকে কোনও চাপ নেই।


সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় অসুস্থ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর খোঁজ নেন অমিত শাহ। দ্রুত আরোগ্য কামনা করে ট্যুইট করেন নরেন্দ্র মোদি। প্রাক্তন ভারত অধিনায়ককে সোমবার দেখতে কলকাতায় আসেন মোদি মন্ত্রিসভার সদস্য অনুরাগ ঠাকুর, অমিত শাহর ছেলে জয় শাহ। যিনি বোর্ডের সচিবও।