সৌভিক মজুমদার ও মনোজ্ঞা লইয়াল, কলকাতা: ভোট পরবর্তী অশান্তিতে নিহত বিজেপি কর্মীর ডিএনএ পরীক্ষার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। নির্দেশ ৭ দিনের মধ্যে হাইকোর্টে পেশ করতে হবে মুখবন্ধ খামে রিপোর্ট।  নিহত অভিজিত্‍ সরকারের ডিএনএ পরীক্ষার নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্ট। মৃতের ভাইয়ের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করতে হবে পরশুদিন সকালে। সকাল ১১টার মধ্যে নমুনা সংগ্রহ করে তা পাঠাতে হবে সিএফএসএল কলকাতায়। ৭ দিনের মধ্যে হাইকোর্টে পেশ করতে হবে রিপোর্ট।


জানা গিয়েছে, নমুনা সংগ্রহের সময় রাজ্য পুলিশের কারও উপস্থিতির আর্জি জানিয়েছে রাজ্য। তবে অ্যাডভোকেট জেনারেলের আর্জি খারিজ করেছে আদালত। পাশাপাশি রাজ্যে ভোট পরবর্তী অশান্তি নিয়ে চূড়ান্ত রিপোর্ট পেশ করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন গঠিত বিশেষ কমিটি।


গত ২ মে বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের দিন কাঁকুড়গাছিতে অশান্তিতে মৃত্যু হয় বিজেপি কর্মী অভিজিতের। তাঁর পরিবার অভিযোগ করে, তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা পিটিয়ে মেরে ফেলেছে অভিজিৎকে। গত ২ জুলাই হাইকোর্টের নির্দেশে অভিজিতের দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত।


তবে দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত করা হলেও, দেহ শনাক্ত করতে পারেনি মৃতের পরিবার। তাই এবার ভোট পরবর্তী অশান্তিতে নিহত, কাঁকুড়গাছির বাসিন্দা, বিজেপি কর্মী অভিজিত্‍ সরকারের DNA পরীক্ষার নির্দেশ দিল আদালত। আজ মঙ্গলবার সকালে কলকাতা হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে ভোটপরবর্তী অশান্তির মামলাগুলির শুনানি ছিল। ভার্চুয়াল মাধ্যমে এই শুনানিতে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল ওয়াই জে দস্তুর জানান, 'আদালতের নির্দেশ মেনে আলিপুরের কমান্ড হাসপাতালে অভিজিত্‍ সরকারের দ্বিতীয়বার ময়নাতদন্ত হয়েছে। কিন্তু মৃতের দাদা দেহ শনাক্ত করতে পারছেন না, কারণ দেহ বিকৃত হয়ে গিয়েছে।'


তিনি বলেন, মৃতের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হতে গেলে DNA পরীক্ষাই এখন একমাত্র উপায়। পাশাপাশি আদালতকে তিনি জানান, 'যে মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে, তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। মৃতের দাদা নমুনা দিলেই আদালতের অনুমতি স্বাপেক্ষে DNA পরীক্ষা করা যেতে পারে।' 


এরপর জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের আইনজীবী জানান, মৃতের দাদা বিশ্বজিত্‍ সরকার DNA পরীক্ষার জন্য সম্মতি দিয়েছেন। এ কথা শুনে আদালতের বৃহত্তর বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, অভিজিৎ সরকারের DNA পরীক্ষা করা হবে। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় মৃতের দাদা বিশ্বজিত্‍ সরকারের কাছ থেকে আলিপুরের কমান্ড হাসপাতালে নমুনা সংগ্রহ করা হবে। 


পরীক্ষার জন্য তা পাঠানো হবে কলকাতার সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরি বা CFSL-এ। ৭ দিনের মধ্যে সেই রিপোর্ট মুখবন্ধ খামে পেশ করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। রাজ্য পুলিশের একজন আধিকারিকের উপস্থিতিতে নমুনা সংগ্রহের জন্য আদালতে আর্জি জানান রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল। 


যদিও এই আবেদন খারিজ করে আদালত জানিয়ে দেয়, কমান্ড হাসপাতালের ওপর আদালতের আস্থা আছে। এ দিন শুনানির সময় রাজ্যের তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেল অভিযোগ করেন, নিহতের দাদা ও পরিবার তদন্তে সহযোগিতা করছেন না। গোপন জবানবন্দির জন্য ৫ বার এবং অন্যান্য প্রক্রিয়ার জন্য ৮ নোটিশ পাঠানো হয়েছে, ইমেল করা হয়েছে। কিন্তু কেউই উত্তর দেননি। পাল্টা মামলাকারীর আইনজীবীরা বলেন, পুলিশের তরফ থেকে ইতিমধ্যে যে ভূমিকা গ্রহণ করা হয়েছে, তাতে মৃত অভিজিত্‍ সরকারের পরিবার পুলিশকে ভয় পাচ্ছে।