নয়াদিল্লি ও কলকাতা: পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন পর্বে অশান্তি নিয়ে বিরোধীরা যখন রাজ্যপালের দ্বারস্থ হচ্ছে, তখন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাল তৃণমূল। এদিকে বুধবারও রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী।
পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে এখন মার পাল্টা মার চলছে! এই প্রেক্ষাপটে শাসক থেকে বিরোধী সবাই যেমন রাজ্য নির্বাচন কমিশন কিংবা রাজভবনে ছুটছে, তেমনই এই দুই প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নও উঠছে বিস্তর। রাজ্যপালের বিরুদ্ধে রাজ্যের কাজে হস্তক্ষেপের অভিযোগে বুধবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয় তৃণমূল। বুধবার তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ২০ জন সাংসদের প্রতিনিধি দল রাজনাথ সিংহর কাছে যান।
রাজ্যপাল যেভাবে তড়িঘড়ি রানিগঞ্জ ও আসানসোল যেতে চেয়েছেন, সেখানে গিয়ে তিনি যেভাবে বিজেপি নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছেন, তা নিয়ে রাজনাথের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে তৃণমূল।
সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় যখন দিল্লিতে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে নালিশ করছেন, তখন কলকাতায় পার্থ চট্টোপাধ্যায় পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে অতিসক্রিয়তার অভিযোগে সরব। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, যাঁরা বিশৃঙ্খলা করছেন তাঁরাই রাজ্যপালের কাছে যাচ্ছেন। তথ্য যাচাই না করেই কথা বলছেন রাজ্যপাল। রাজভবন অতিসক্রিয়। কাল রাজ্যপালের কাছে আসল তথ্য বলব।
তৃণমূলের নালিশের প্রেক্ষিতে বিজেপি প্রত্যাশিতভাবেই রাজ্যপালের পাশে দাঁড়িয়েছে! আর তাৎপর্যপূর্ণভাবে ইস্যুতে তাদের সুরের সঙ্গে কংগ্রেসের সুর মিলে যাচ্ছে। বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, রাজ্যপাল ঠিক কাজ করছেন। সেখানে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, রাজ্যপাল ভাল মানুষ। আমাদের কথা শুনছেন। নির্লজ্জভাবে তৃণমূল রাজনাথের কাছে নালিশ করছে। তৃণমূলের নালিশ প্রসঙ্গে কিছু না বললেও, রাজ্যপাল ইস্যুতে ঘুরিয়ে গেরুয়া শিবিরকে বিঁধেছে সিপিএম। এদিকে, এদিন রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন মুখ্যসচিব মলয় দে এবং স্বরাষ্ট্র সচিব অত্রি ভট্টাচার্য। রাজভবনে যান রাজ্য নির্বাচন কমিশনার অমরেন্দ্রকুমার সিংহও। রাজ্যপালের সঙ্গে তাঁর বৈঠকে মনোনয়ন ঘিরে অশান্তি থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা সহ যাবতীয় বিষয় উঠে আসে। সূত্রের খবর, রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে রাজ্যপাল বলেন, যেকোনও প্রকারে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট করাতে হবে।
কমিশনার তখন উত্তরে বলেন, তিনি চেষ্টা করছেন। রাজ্যপাল এরপর বলেন, বিরোধীদের মনোনয়ন পেশে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এটা আপনার দেখা উচিত। উত্তরে অমরেন্দ্রকুমার সিংহ ফের বলেন, চেষ্টা করছি। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। কেশরীনাথ ত্রিপাঠী এদিন রাজ্য নির্বাচন কমিশনারকে জানান, বিরোধীরা কেন্দ্রীয় বাহিনী আনার দাবি জানাচ্ছে।
তখন অমরেন্দ্রকুমার সিংহ বলেন, আমিও রাজ্যকে জানিয়েছি, পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী দরকার। রাজ্য সরকার অবশ্য এখনও পুলিশ দিয়ে ভোট করানোর সিদ্ধান্তেই অনড়। সব মিলিয়ে পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে ফের কার্যত সম্মুখসমরে রাজভবন ও নবান্ন।