ঋত্বিক প্রধান, মোহন প্রসাদ, সন্দীপ সরকার: সংক্রমণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসতেই গমগম করছে দিঘা। কোভিড বিধি অমান্য করেই সৈকতে ঘুরছেন পর্যটকদের বড় অংশ। সমুদ্রের পাশাপাশি পাহাড়েও বাড়ছে ভিড়। এদিকে, মাস্ক ছাড়া বেড়ানোর এমন প্রবণতায় চিন্তিত চিকিৎসকরা। কঠোরভাবে বিধি পালনের কথা বলছেন তাঁরা।
করোনাবিধি নিয়ে কলকাতায় কড়াকড়ির এই ছবি ধরা পড়লেও, রাজ্যের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র দিঘায় ধরা পড়েছে উইকএন্ডের পুরনো চেনা ছবি।
ক্রমেই স্বাভাবিক হচ্ছে যান চলাচল। আর ভিড় বাড়ছে দিঘা, মন্দারমণিতে। তবে করোনাবিধির বালাই নেই। অধিকাংশ পর্যটকেরই নেই মাস্ক। কার্যত গা ঘেঁষাঘেঁষি করে চলছে সমুদ্রস্নান।
সংক্রমণ কিছুটা কমেছে ঠিকই। কিছু বিধি নিষেধও শিথিল করেছে সরকার। কিন্তু করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা এখনও কাটেনি। এই পরিস্থিতিতে মানুষের এত উদাসীন হওয়াটা ঠিক কি না প্রশ্ন করায় এল বেপরোয়া উত্তর।
দিঘার এক পর্যটক বললেন, আমরা হাওয়া খেতে এসেছি। মুখে মাস্ক নেই কেন, প্রশ্ন করায় উত্তর এল, আমাদের কাছে ব্যবস্থা আছে।
কেউ কেউ আবার আজব অজুহাত দিলেন। বললেন, মাস্ক পরেছিলাম, ছবি তুলছিলাম বলে মাস্ক খুলেছি। আবার একজন বললেন, বৃষ্টি হয়েছিল মাস্ক ভিজে গেছে, তাই ফেলে দিয়েছি।
দিঘা হাউসফুল না হলেও, প্রায় সব হোটেলই কম-বেশি পর্যটক রয়েছেন। হোটেল মালিকদের দাবি, বিধি কার্যকরে তারা ব্যবস্থা নিয়েছেন।
দিঘা শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক বিপ্রদাস চক্রবর্তী বললেন, প্রত্যেক হোটেলকে বিধি মেনে খুলতে বলেছি। করোনা বিধি মেনে প্রত্যেককে ঢোকানো হচ্ছে।
উদ্বেগ বাড়িয়ে দৈনিক সংক্রমণে রবিবার কলকাতাকে ছাপিয়ে গেছে পূর্ব মেদিনীপুর। সমুদ্রের পাশাপাশি, জুলাইয়ের শুরু থেকে পর্যটক বাড়তে শুরু করেছে পাহাড়েও।
অন্যদিকে, জুলাই মাসের প্রথম ৯ দিনে সংক্রমণে কলকাতাকে টেক্কা দিয়েছে দার্জিলিং। তবে, দিঘার তুলনায় বেশি সতর্ক দার্জিলিং। শহরের ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে দেখা গেল চেনা ব্যস্ততা। এসবই বুঝিয়ে দিয়েছে ছন্দে ফিরছে শৈল শহর।
এক পর্যটক জানালেন, হোটেল, রেস্টুরেন্টগুলিতে কোভিড বিধি খুব ভালভাবে মানছে। এখানে এত ভিড় নেই। আরেকজন বললেন, কোভিড বিধি মেনে এসেছি, হোটেলেও সবরকম ব্যবস্থা নিয়েছি।
হোটেল কর্তৃপক্ষগুলির দাবি, তারা অর্ধেকের বেশি ঘরে বুকিং করছেন না। গাড়িতেও মানা হচ্ছে একই বিধি। পরিবহণকর্মী অমর প্রধান বলেন, গাড়িতে বেশি লোক নিচ্ছি না, ৫০ শতাংশ কমিয়েছি, মাস্ক,ভ্যাকসিন নিয়েছে যে ড্রাইভারা তাদের নেওয়া হয়েছে।
চিকিত্সকরা বলছেন, কিছু বিধি নিষেধ উঠলেও করোনার সংক্রমণ থেকে বাঁচতে এখনও মাস্ক পরা মাস্ট। মানতে হবে সামাজিক দূরত্ববিধিও। কিন্তু সেসব অগ্রাহ্য করলেই বিপদ।
চিকিৎসক প্রভাসপ্রসূন গিরি বলেন, আমাদের কড়া হতে হবে অথবা প্রত্যেক ট্যুরিস্ট স্পটে নির্দিষ্ট সংখ্যক ঢুকতে দিতে হবে, সংযম না হলে বড় বিপদ।
করোনার তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার আশঙ্কার মধ্যেই, দিঘার মতো হটস্পটে পর্যটকদের বাঁধভাঙা ভিড় দেখে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।