কলকাতা ও শিলিগুড়ি: ‘শটগানের গুলির আঘাতে জখম হয়ে বিজেপি কর্মীর মৃত্যু।পুলিশ এধরনের শটগান ব্যবহার করে না।এটা স্পষ্ট উত্তরকন্যা অভিযানে ছিল সশস্ত্র বহিরাগতরা।খুব কাছ থেকে বিজেপি কর্মীকে গুলি করা হয়েছে’।ময়নাতদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করে ট্যুইট পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের।
বলা হয়েছে, ‘বিক্ষোভে সশস্ত্র কাউকে এনে গুলির প্ররোচনা অভূতপূর্ব। ‘অস্ত্র ব্যবহার করে হিংসা ছড়ানোর উদ্দেশ্য ছিল।সিআইডি-কে তদন্ত করতে বলা হয়েছে।এই ঘৃণ্য খুনের পিছনে যারা, তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা।’



রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু দাবি করেছেন, পুলিশই গুলি চালিয়েছে। সত্য ধামাচাপা দিতে সিআইডি তদন্ত করার কথা বলা হচ্ছে। আমরা আদালতে যাব।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের মন্তব্য, পুলিশের দিক থেকেই গুলি চলেছে। পুলিশ গুলি না চালালে কে চালাল? সঠিক তদন্ত হলেই সব স্পষ্ট হয়ে যাবে।

বিজেপির মন্তব্যে গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। তিনি বলেছেন, পুলিশের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বলছে ছররা গুলিতে মৃত্যু হয়েছে উলেন রায়ের। হয়তো শটগান এনেছিল বিজেপিই। আদালতে গেলে যাক।
উল্লেখ্য, গতকাল দলের যুব মোর্চার উত্তরকন্যা অভিযান চলাকালে দলীয় কর্মীর মৃত্যুর প্রতিবাদে আজ উত্তরবঙ্গে ১২ ঘন্টার বনধের ডাক দিয়েছে বিজেপি।
২ মাস আগে বিজেপির নবান্ন অভিযান ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়েছিল কলকাতা-হাওড়ায়।আর সোমবার তাঁদের উত্তরকন্যা অভিযানকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় শিলিগুড়ি-ফুলবাড়ি।পুলিশের মারে তাদের এক দলীয় কর্মীর মৃত্যুও হয়েছে বলে অভিযোগ করে বিজেপির!
বিজেপির মিছিল আটকাতে গতকাল শিলিগুড়ির তিন বাতি মোড়ের কাছে তিনটি ব্যরিকেড তৈরি করেছিল পুলিশ। প্রথমে দুটি ব্যরিকেড ভেঙে দেন আন্দোলনকারীরা। এরপর তৃতীয় ব্যারিকেডের কাছে পৌঁছতেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। জলকামান চালানো হয়। উল্টোদিক থেকে পুলিশে লক্ষ্য করে শুরু হয় ইটবৃষ্টি।আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয় পুলিশের ব্যারিকেডে।পাল্টা কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশও। সঙ্গে ব্যাপক লাঠিচার্জ।এরই মধ্যে এক বিজেপি কর্মী আহত হন।
ঠিক একইভাবে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় ফুলবাড়িও। বিজেপির দাবি, তাঁদের মৃত কর্মীর নাম উলেন রায়।বয়স ৫০ বছর।তাঁর বাড়ি গজলডোবায়।ফুলবাড়ি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি বিজেপির।
যদিও গতকালই রাজ্য পুলিশের তরফ থেকে ট্যুইট করে দাবি করা হয়েছিল ,বিজেপির উত্তরকন্যা অভিযানের সময় সংযম দেখিয়েছে পুলিশ। লাঠিচার্জ বা বন্দুকের ব্যবহার করা হয়নি। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে শুধুমাত্র জলকামান ও টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করা হয়েছে। একজনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। ময়নাতদন্তের পরই মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
যাবতীয় অশান্তির জন্য বিজেপিকে দায়ী করেছে তৃণমূল। সব মিলিয়ে বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপির উত্তরকন্যা অভিযানকে ঘিরে আরও উত্তপ্ত বঙ্গ রাজনীতি।
ফুলবাড়িতেও জলকামান ও বিশাল পুলিশ মোতায়েন ছিল। সেখানেই তাদের কর্মী উলেন রায়ের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি বিজেপির। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ দাবি করেনপুলিশ পাখি মারার ছড়রা গুলি চালিয়েছে। পুলিশের সঙ্গে দুষ্কৃতীরা মিশে ছিল। নন্দীগ্রামের কায়দায় গুলি চালানো হয়েছে। পুলিশ ওপর থেকে বোমা ছুঁড়েছে।
পাল্টা বিজেপির বিরুদ্ধেই হিংসাত্মক আন্দোলনের অভিযোগ তোলে রাজ্য পুলিশ। ট্যুইটারে তাদের তরফে দাবি করা হয়,শিলিগুড়িতে একটি রাজনৈতিক দলের সমর্থকরা (বিজেপি) প্রতিবাদ কর্মসূচির সময় হিংসাত্মক ভূমিকা পালন করেছেন। আগুন জ্বালানোর পাশাপাশি, গুলি চালানো ও সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর করা হয়েছে।
পুলিশকে পাঠানো মেডিকো লিগাল রিপোর্টে হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, গুলির মতো কোনও বস্তু ছুটে এলে যে ধরনের আঘাতের চিহ্ন তৈরি হয়, নিহতের বুকের চারদিকে এবং তলপেটের উপরের অংশে সেরকমই ক্ষতচিহ্ন লক্ষ্য করা গেছে।