সমীরণ পাল, বরানগর: বরানগর হাসপাতালে টিকার জন্য ৩ দিন ধরে লাইন। শুক্রবার থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে, দাবি ভ্যাকসিন গ্রহীতাদের একাংশের। শনিবারও ভ্যাকসিন পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ। কাল ভ্যাকসিন মিলবে বলে দাবি। প্রতিক্রিয়া মেলেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষর।


শুক্রবার থেকে টানা লাইনে দাঁড়িয়ে। কিন্তু রবিবার হয়ে গেলেও মেলেনি ভ্যাকসিন। রাজ্যে ভ্যাকসিন সঙ্কটের চিত্রটা ফের একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেল বরানগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালের রবিবারের এই ঘটনা। অভিযোগ, এখানে ভ্যাকসিন পেতে টানা তিন দিন বা ৭২ ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন গ্রাহকদের একাংশ। ভ্যাকসিন গ্রাহক রিনা সাঁতরা বলেন, শুক্রবার থেকে লাইন দিচ্ছি। এখনও ভ্যাকসিন পেলাম না।


গ্রাহকদের অভিযোগ, এই হাসপাতাল থেকে কোনওদিন ৭০ জন, কোনওদিন ১০০ জনকে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। ফলে দীর্ঘ লাইনের যাঁরা পিছনের দিকে রয়েছেন, তাঁরা সুযোগই পাচ্ছেন না। আরেক ভ্যাকসিন গ্রাহকের কথায়, লাইনে এগিয়ে গেলে দেখছি, নতুন লোক ঢুকে যাচ্ছে। আবার পিছিয়ে পড়ছি। 


তাই এই পরিস্থিতি এড়াতে, রবিবার ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা না থাকলেও, লাইন ছাড়তে নারাজ গ্রাহকদের একাংশ। কিন্তু কেন এই পরিস্থিতি? এ বিষয়ে জানতে হাসপাতালের সুপারকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। যদিও ভ্যাকসিনের জোগানের অপ্রতুলতাকেই দায়ী করেছেন হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান ও স্থানীয় বিধায়ক।


বরানগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালের চেয়ারম্যান তাপস রায় বলেন, ভ্যাকসিনের ব্যাপারে মনিটরিং করছি। ভ্যাকসিনের জোগান না তাকলে কী করব? সুপারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। শনিবারই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ভ্যাকসিন না মেলায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। উত্তর দিনাজপুরে হাতাহাতি এমনকি ইটবৃষ্টিও দেখা যায়।  এই পরিস্থিতিতে ভ্যাকসিনের অপ্রতুলতা নিয়ে তরজায় জড়িয়েছে তৃণমূল ও বিজেপি।


বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, সরকার বলছে না তাদের হাতে কত ভ্যাকসিন আছে। জুলাইয়ে ৯০ লক্ষ ৭০ হাজার ভ্যাকসিন এসেছে। ডিস্ট্রিবিউশনের কী ব্যবস্থা করেছে? মনে হয় অনেক ভ্যাকসিন নষ্ট হচ্ছে। মানুষের জানার অধিকার আছে, কত ভ্যাকসিন আসছে, কত দেওয়া হচ্ছে আর কত নষ্ট হচ্ছে।


ভ্যাকসিনের চাহিদা ও জোগান প্রসঙ্গে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তার দাবি, বর্তমান পরিকাঠামোয় প্রতি মাসে দেড় কোটি ডোজ ভ্যাকসিন দিতে সক্ষম রাজ্য। কিন্তু একমাত্র বাধা হল সময় মতো পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন না পাওয়া। এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রের তরফে ২ কোটি ৩৬ লক্ষ ভ্যাকসিনের ডোজ মিলেছে।  রাজ্য কিনেছে প্রায় ১৮ লক্ষ ডোজ। চলতি মাসে ৭৫ লক্ষ ডোজ পাওয়ার কথা থাকলেও, মিলেছে ৫৪ লক্ষ। রাজ্যে কোভ্যাক্সিনের ডোজ মজুত রয়েছে মাত্র এক লক্ষ।  এখনও পর্যন্ত ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সীদের মধ্যে ভ্যাকসিন পেয়েছেন ৮৭ লক্ষ। ৪৫ থেকে ৬০ বছর বয়সীরা পেয়েছেন ১ কোটি ৬ লক্ষ। এবং ষাটের ঊর্ধ্বে ভ্যাকসিন পেয়েছেন সাড়ে ৮৩ লক্ষ রাজ্যবাসী।