বোলপুর: রাজ্যে বিধানসভার ভোটের দিন ঘোষণার আগেই জমে উঠেছে রাজ্যের রাজনৈতিক ময়দান। কয়েকদিন আগেই যে বোলপুরে রোড শো-তে বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি অমিত শাহর রোড শো-তে ভিড় উপচে পড়েছিল, সেই জায়গাতেই তৃণমূল নেত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদযাত্রায় জনস্রোত। বীরভূমের রাঙামাটিতে পথ হাঁটলেন তৃণমূল নেত্রী। পদযাত্রার শেষে বিজেপিকে নিশানা করলেন মমতা। অমিত শাহর আক্রমণের জবাব ফেরালেন পদযাত্রার শেষে জামবুনির সভায়। কটাক্ষ করলেন অমিত শাহর আদিবাসীর বাড়িতে আহার-পর্বকে।


বীরভূমে রোড শো-তে এসে অমিত শাহ দাবি করেছিলেন, রাজ্যে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে ২০০ আসন পেয়ে জয়ী হবে। সুযোগ পেলে সোনার বাংলা গড়বে বিজেপি। তাঁর সেই দাবিকে কটাক্ষ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, নতুন করে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখানোর দরকার নেই। সোনার বাংলার স্রষ্টা রবীন্দ্রনাথই।

রবীন্দ্রনাথ সহ বাংলার মণীষীদের সম্পর্কে বিজেপিকে তৃণমূলের আক্রমণের ধারা অব্যাহত রাখলেন দলনেত্রী। সেই সঙ্গে নোবেল-জয়ী অর্থনীতিবিদ অর্মত্য সেনকে হেনস্থার অভিযোগ নিয়ে ফের সরব হয়েছেন তিনি। মমতার অভিযোগ, ‘কিছুদিন ধরে কুকথায় রবীন্দ্রনাথ-অমর্ত্য সেনকে আক্রমণ করা হচ্ছে। বিশ্বভারতী, শান্তিনিকেতনের অপমান করা হচ্ছে।বিশ্বভারতীতে ঘৃণ্য রাজনীতির আমদানি করা হয়েছে।ঘৃণ্য-বিদ্বেষমূলক রাজনীতির আমদানি হয়েছে।’

সম্প্রতি রাজ্য সফরে এসে অমিত শাহ আদিবাসী ও তফশিলি জাতিভূক্তদের বাড়িতে আহার সেরেছেন। এই ঘটনাকে ফের কটাক্ষ করেছেন মমতা। কারুর নাম না করে মমতা বলেছেন, ‘প্রতি সপ্তাহে একবার চাই ফাইভ স্টারের খাবার। অথচ দেখাচ্ছে আদিবাসী বাড়ির খাবার’

এভাবে আদিবাসীদের বরং অপমানই করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন মমতা। তিনি বলেছেন, ‘আদিবাসীদের অপমান করার অধিকার নেই।’

নাম না করে বিজেপিকে আক্রমণ করে তিনি বলেছে, ‘এদের দলীয় পতাকা বহন করে এজেন্সির লোকেরা।’

কেউ কেউ টাকা ছড়িয়ে ভোট কিনতে চাইছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। মমতা বলেছেন, ‘কেউ টাকা দিলে গরিব মানুষ নিয়ে নিন। কিন্তু ভোটে ওদের বিদায় দিন।’

সম্প্রতি তৃণমূলের বেশ কয়েকজন বিধায়ক ও সাংসদ বিজেপিতে সামিল হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। এদিন মমতা বলেছেন, ‘টাকা দিয়ে কয়েকটা এমএলএ কিনে নিলে, তৃণমূলকে কেনা যায় না।

বিশ্বভারতীর পরিস্থিতি নিয়েও বিজেপিকে নিশানা করেছেন তিনি। বলেছেন, ‘বিজেপির মার্কামারাকে বিশ্বভারতীর উপাচার্য করে নিয়ে এসেছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, যাদবপুরে আমরা এসব করি না।

তিন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে চলতি কৃষক আন্দোলনের প্রসঙ্গও উঠে এসেছে মমতার ভাষণে। তিনি বলেছেন, ‘কৃষকদের আন্দোলন চলছে একমাসের উপর ধরে।’ কেন্দ্রের নয়া কৃষি আইনকে কৃষকদের স্বার্থবিরোধী বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। মমতা বলেছেন, ‘কৃষকদের জমির ফসল নিয়ে পালিয়ে যাবে, এই ভারতবর্ষ তৈরি করছে বিজেপি। ’

মানুষের নিঃস্বার্থ সেবার প্রসঙ্গও উঠে এসেছে মমতার ভাষণে। তিনি বলেছেন, ‘আমার একটাই পরিবার, মানুষের পরিবার, আর কেউ নেই।’

তিনি বলেছেন, ‘গ্রামে বহিরাগত দেখলে, পুলিশে খবর দিন। ভো কাট্টা করে বিরোধীদের উড়িয়ে দিন’।

আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলই জয়ী হবে বলে মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ’২১ আমাদের গর্ব, ’২১ আমাদের পথ দেখাবে। ‘বহিরাগতদের ঢুকিয়ে দেবে, ভোটার তালিকায় নাম তুলুন।’