কলকাতা ও নয়াদিল্লি: সুপ্রিম কোর্টে পঞ্চায়েত-মামলা নিয়ে শুনানি শেষ। বিজেপির মামলায় সোমবার রায় দেবে সুপ্রিম কোর্ট। মনোনয়ন পেশে সমস্যা হলে পদক্ষেপ নিতে হবে পুলিশ সুপার ও জেলা পুলিশকে। অধীর চৌধুরীর মামলার প্রেক্ষিতে নির্দেশ কলকাতা হাইকোর্টের।
শুক্রবার বিজেপির মামলায় শুনানির পর সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, তারা রায় দেবে সোমবার। আর কংগ্রেসের মামলার প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, কোথাও প্রার্থীরা মনোনয়ন পেশে বাধা পেলে আইনানুগ পদক্ষেপ নিতে হবে সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপার এবং জেলা পুলিশকে।
সুপ্রিম কোর্টে এদিন বিজেপির মামলার শুনানি ছিল বিচারপতি আর কে অগ্রবাল এবং বিচারপতি অভয় মনোহর সাপ্রের বেঞ্চে। বিজেপির তরফে মুকুল রোহাতগি সওয়াল করেন, বিরোধীরা কোথাও মনোনয়ন পেশ করতে পারছে না।
রাজ্যের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি তখন পাল্টা সওয়ালে বলেন, এখানে একটি রাজনৈতিক দল মামলা করেছে। কোনও প্রার্থী এসে অভিযোগ করেননি যে, তিনি মনোনয়ন দিতে পারেননি। তেমনটা হলে বিবেচনা করা যেত।
উত্তরে মুকুল রোহাতগি নথি দেখিয়ে বলেন, বীরভূমে ২২৪৭টি পঞ্চায়েতের আসনের মধ্যে তৃণমূল মনোনয়ন দিয়েছে ১৪৪৯টিতে। সেখানে বিজেপি মনোনয়ন পেশ করেছে মাত্র ১২০টিতে। সিপিএম আর কংগ্রেস মনোনয়ন দিয়েছে ১৮টি ও ১০টিতে। বিভিন্ন জেলায় এই অবস্থা। গণতন্ত্রকে হত্যা করা হচ্ছে।
রাজ্যের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি আবার সওয়াল করেন, ৮০ শতাংশ জায়গায় বিজেপি বেশি মনোনয়ন দিয়েছে। তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমরা ফিগার দিয়ে দেখিয়েছি। দিল্লিতে নাটক করছে।
বিজেপির আরেক আইনজীবী এ কে পটওয়ালিয়া এদিন বলেন, রাজ্য নির্বাচন কমিশন নির্দেশ দিয়েছে, কয়েকটি জায়গায় গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির মনোনয়ন বিডিও অফিসের পাশাপাশি দেওয়া যাবে মহকুমাশাসকের অফিসে। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে, বিডিও অফিসে সন্ত্রাস চলছে। বিজেপির কৌসুলী মুকুল রোহাতগি আবেদনে জানান, অনলাইনে মনোনয়ন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।
কিন্তু, রাজ্যের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি পাল্টা সওয়াল করে বলেন, মনোনয়নের সময় প্রার্থীকে সশরীরে উপস্থিত থাকতে হয়। তাই অনলাইনে এই প্রক্রিয়া সম্ভব নয়। দু’পক্ষের সওয়াল-জবাব শুনে বিচারপতিরা জানিয়েছেন, তাঁরা সোমবার এই মামলার রায় দেবেন।
কলকাতা হাইকোর্টে এদিন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী নিজে সওয়াল করে বলেন, বিরোধীরা মনোনয়ন পেশ করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়ছে। এরপর মনোনয়ন প্রত্যাহার করানোর জন্য সন্ত্রাস হবে। ভোটের সময়ও সন্ত্রাস হবে। সেজন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হোক। যদিও, রাজ্য নির্বাচন কমিশন নথি দেখিয়ে সওয়াল করে বলে, ইতিমধ্যে জেলা পরিষদের মনোনয়নে তৃণমূলের থেকে এগিয়ে বিজেপি। বিজেপি যেখানে ৮৭টি মনোনয়ন পেশ করেছে, সেখানে তৃণমূল পেশ করেছে ৬১টি মনোনয়ন।
দু’পক্ষের সওয়াল জবাব শুনে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দেন, কোথাও প্রার্থীরা মনোনয়ন দিতে গিয়ে বাধার মুখে পড়লে সেক্ষেত্রে আইনানুগ পদক্ষেপ নিতে হবে পুলিশ সুপার ও জেলা পুলিশকে। সুষ্ঠু ভোটের জন্য রাজ্য সরকার ও রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চেয়ে ১৬ এপ্রিলের মধ্যে হলফনামাও চেয়েছে আদালত। ২০ এপ্রিল এই মামলার পরবর্তী শুনানি।