আলিপুরদুয়ার: ‘বন সহায়ক পদ নিয়ে কারসাজি করা হয়েছে। রাজ্য সরকার তদন্ত করছে। চুরি করে বিজেপিতে চলে গেছে।’ নাম না করে সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া রাজ্যের প্রাক্তন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বুধবার আলিপুরদুয়ারের প্য়ারেড গ্রাউন্ডে জনসভা করেন তৃণমূলনেত্রী। সেখান থেকে দলত্যাগী ও বেসুরোদের উদ্দেশ্যে কড়া কথা শোনান তৃণমূলনেত্রী। বলেন, ‘যারা লোভী, ভোগী তাঁদের জন্য রাস্তা খোলা, চলে যান।’ দলের 'বেসুরো' নেতাদের উদ্দেশ্যে স্পষ্ট বার্তা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, ‘যে বেশি দুর্নীতি করেছে তাঁরা পালিয়ে যাচ্ছে।’
নেত্রী মনে করিয়ে দেন, ‘তৃণমূলে যাঁরা আছেন শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে থাকতে হবে।’ বলেন, ‘তৃণমূলের টিকিট টাকা দিয়ে বিক্রি হয় না। তৃণমূলের টিকিট পেতে লবি করতে হয় না। তৃণমূলের সাংসদ-বিধায়কদের টাকা দিয়ে কেনা যায় না।
উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আক্রমণ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, ‘পরিযায়ী শ্রমিকদের ট্রেন পাঠাতে পারেননি প্রধানমন্ত্রী। যাঁরা দুর্নীতিগ্রস্ত তাঁদের জন্য চার্টার্ড বিমান পাঠাচ্ছেন।’
বুধবার আলিপুরদুয়ারের প্য়ারেড গ্রাউন্ডে জনসভা করেন তৃণমূলনেত্রী। সেখান থেকেই তৃণমূলনেত্রী বলেন, ‘১৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ক্ষমতায় এসে কোনও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি। আজ ব্যাঙ্ক, বিমা সব বেসরকারিকরণ করে দিচ্ছে। সব বিক্রি করে দিচ্ছে, তেলের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।’
তিনি যোগ করেন, ‘কৃষকরা ২ মাস ধরে রাস্তায় বসে আন্দোলন করছে। কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও হেলদোল নেই। বিজেপি জমিদারের দল, গরিবের দল নয়।’
বিজেপিকেও এদিন তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, ‘বিজেপি লোভ-ভোগে ভরে গেছে। বিজেপিকে বিদায় দিন, এরা দেশ বেচে দেবে। দাঙ্গাবাজ, লুঠেরাবাজ বিজেপির জায়গা নেই।’
তৃণমূলনেত্রীর আহ্বান, ‘বিজেপিকে বিদায় দিন, এরা দেশ বেচে দেবে। তিনি বলেন, ‘দাঙ্গাবাজ, লুঠেরাবাজ বিজেপির জায়গা নেই। বাংলায় অনেক ভাল আছেন আদিবাসীরা। অসম, ত্রিপুরায় এনআরসি-র নামে অত্যাচার চলছে। এনপিআর বাংলায় আমরা করতে দেব না। আমরা সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলি। কিন্তু গুজরাট কখনও বাংলাকে শাসন করতে পারবে না।’
গত লোকসভা ভোটে এই তিন জেলাতেই খারাপ ফল করে তৃণমূল। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনুমান, বিধানসভা ভোটের আগে দলীয় কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সভা।
এর আগে, গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহারে সভা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দেড়মাসের মধ্যে ফের উত্তরবঙ্গ সফরে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন মমতা বলেন, ‘ভোটের আগে চা বাগান খোলার কথা বলেছিল বিজেপি। লোকসভা ভোটে জিতে বিজেপি পালিয়ে গেছে। বলেছিল উত্তরবঙ্গকে সোনার বাংলা তৈরি করবে। জেতার পর থেকে বিজেপি সাংসদদের দেখা যায়নি।’
তিনি যোগ করেন, ‘চা বাগানের উন্নয়নে রাজ্য সরকার সব করেছে। বিজেপি শুধু ভোটের আগে মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে যায়। সব উদ্বাস্তু কলোনিকে পাট্টা দিচ্ছে রাজ্য সরকার।’
উত্তরবঙ্গের মানুষের উদ্দেশে মমতা বলেন, ‘ভোটের পর কাউকে দেখা যাবে না। একজনও ভোটে জিততে পারবে না। সিপিএম-কংগ্রেস কিছু আসনে জিতবে। বিজেপি একটাও আসনে জিততে পারবে না। ভোটের সময় বিজেপি টাকা দেবে। টাকা নিয়ে খেয়ে নিন, ভোট তৃণমূলেই দিন। আমরা চাই উন্নয়ন, ওরা চায় বিসর্জন।’