ঝিলম করঞ্জাই ও সমীরণ পাল, উত্তর ২৪ পরগনা:  অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি বিজেপি নেতা বাবু মাস্টারের শরীরে একাধিক স্প্লিন্টারের আঘাত রয়েছে। তাই চিকিৎসকরা আরও ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখবেন তাঁকে। গড়া হল ৪ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড।


হাসপাতাল সূত্রে খবর, মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যরা বাবু মাস্টারের শরীরের ক্ষতস্থানগুলি পরীক্ষা করবেন। আর কোন স্প্লিন্টার ঢুকে রয়েছে কিনা তাও দেখা হবে। আপাতত এইচডিইউ-তেই পর্যবেক্ষণে রাখা হবে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া ফিরোজ কামাল গাজি ওরফে বাবু মাস্টারকে।  


গতকাল বিজেপি নেতাকে হাসপাতালে দেখতে যান শুভেন্দু অধিকারী, শঙ্কুদেব পণ্ডা। অন্যদিকে, দলীয় নেতার উপর হামলার প্রতিবাদে আজ ঘটনাস্থলে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি কর্মীরা।


এদিন খড়গপুরে চা-চক্রে যোগ দিয়ে বাবু মাস্টারের উপর হামলা প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, অনেকদিন ধরেই বাবু মাস্টারকে টার্গেট করা হয়েছিল। বিরোধীদের উপর এই ধরনের প্রাণঘাতী আক্রমণ গণতন্ত্রে চলতে পারে না। নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য ভয়ের পরিবেশ তৈরির চেষ্টা চলছে। 


গত ১৯ ডিসেম্বর তৃণমূল ছেড়ে পদ্ম শিবিরে যোগ দেন শুভেন্দু অধিকারীর ঘনিষ্ঠ ফিরোজ কামাল গাজি ওরফে বাবু মাস্টার। একসময় বসিরহাটের তৃণমূলের এই দাপুটে নেতা বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর নিজের এলাকায় বেশি থাকছিলেন না।


গতকাল বসিরহাটে সাংগঠনিক সভা সেরে গাড়িতে কলকাতায় ফিরছিলেন বাবু মাস্টার। মিনাখাঁর লাউগাছি পুলিশ ফাঁড়ি থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে বাসন্তী হাইওয়েতে তাঁর গাড়ি ঘিরে গুলি-বোমা ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। 


বিজেপি সূত্রে খবর, বসিরহাটে সাংগঠনিক সভা সেরে গাড়িতে করে কলকাতায় ফিরছিলেন বাবু মাস্টার। চালকের বাঁদিকে বসেছিলেন তিনি। পিছনের আসনে সহযোগী আনোয়ার হোসেন। 


প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, রাত সাড়ে আটটা নাগাদ বাসন্তী হাইওয়ের উপর মিনাখাঁর লাউগাছি পুলিশ ফাঁড়ি থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে স্পিড ব্রেকারে গাড়ির গতি কমিয়ে দেন চালক। 


ওই সময় বাইকে করে এসে গাড়ি ঘিরে ধরে এলোপাথাড়ি গুলি-বোমা ছুড়তে থাকে বেশ কয়েকজন দুষ্কৃতী। 


হামলায় গুরুতর আহত হন বাবু মাস্টার। ওই অবস্থায় গাড়ি নিয়ে লাউগাছি পুলিশ ফাঁড়িতে যান চালক। সেখান থেকে বাবু মাস্টারকে নিয়ে যাওয়া হয় অ্যাপোলো হাসপাতালে। 


চিকিৎসকরা জানিয়েছেন,  বাবু মাস্টারের শরীরের অসংখ্য আঘাত রয়েছে। মূলত বুকের বাঁদিক, মুখ, পিঠ ও হাতে আঘাত বেশি। অনুমান বোমার স্প্লিন্টার ও গাড়ির উইন্ডস্ক্রিনের কাচ ভেঙে এই আঘাত লেগেছে। সব স্প্লিন্টার বের করে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছে। এখন তিনি বিপন্মুক্ত।


এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। বিজেপি সূত্রে খবর, দল বদলের পর থেকে বসিরহাটে  থাকতেন না বাবু মাস্টার। কাজ সেরে রোজ একই রাস্তা দিয়ে কলকাতায় ফিরতেন। অভিযোগ, ছক কষেই এই হামলা চালানো হয়েছে। 


পুলিশ সূত্রে খবর,  বাসন্তী হাইওয়ের সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। হামলাকারীরা আগে থেকে অপেক্ষা করছিল বলে অনুমান। তবে তারা বাইকে করে না হেঁটে এসেছিল তা স্পষ্ট নয়। গাড়িতে গুলির দাগ মেলেনি। উইন্ডস্ক্রিনে বোমা মারায় কাচ ও স্প্লিন্টারের আঘাতে আহত হয়েছেন বিজেপি নেতা।