আশাবুল হোসেন, ডায়মন্ড হারবার: শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়দের পর এবার দীপক হালদার। তৃণমূল কংগ্রেস ছাড়লেন ডায়মন্ড হারবারের বিধায়ক। ‘‘আগে জানলে টিকিট দিতাম না...।’’ দলত্যাগীদের বিরুদ্ধে কটাক্ষ ছুঁড়ে দিলেন তৃণমূল নেত্রী।


সোমবার দলীয় নেতৃত্বকে ইস্তফা পত্র পাঠিয়ে দেওয়ার পর ক্ষোভ উগরে দেন তিনি। দীপক হালদার বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন আমি দলে কাজ করতে পারছিলাম না, একাধিকবার জানিয়ে উপরমহল কোনও সমাধানের চেষ্টা করেনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা ছাড়া আমাকে কোনও সভায় ডাকা হত না। বিভিন্নভাবে আমি অপমানিত হয়েছি। আমার মনে হয়েছে, আর এভাবে থাকা সম্ভব নয়। তাই দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।’’


শুধু তাই নয়, জল্পনা উস্কে দিয়েছেন বিজেপিতে যোগদান নিয়েও! দীপক হালদার বলেন, ‘‘বিজেপি বা অন্য কোনও দলে যাব কি না এখনও ভাবিনি। আগামী দিনে যা সিদ্ধান্ত নেব, সেটা ডায়মন্ডহারবারবাসীর কথা ভেবেই করব। ডায়মন্ড হারবার টাউনের বিজেপি সভাপতি সুরজিৎ হালদার বলেন, ‘‘যদি বিজেপিতে আসেন, তাহলে স্বাগত, আমরা একসঙ্গে কাজ করব ও খোলা মনে কাজ করব।’’


২০১১-র বিধানসভা নির্বাচনে, প্রথমবার ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্র দখল করে তৃণমূল। ২০ হাজার ৭৭৪ ভোটে জেতেন দীপক হালদার। তবে ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে, ওই কেন্দ্রে তৃণমূলের জয়ের ব্যবধান কমে ১৫ হাজার ৩৭ হলেও বিধায়ক পদ ধরে রাখেন তিনি। কিন্তু ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের বিধানসভা ভিত্তিক ফল অনুযায়ী ডায়মন্ড হারবার বিধানসভা কেন্দ্রে বিপুল ভোটে এগিয়ে তৃণমূল। তারপরেও দলের একাংশের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে তৃণমূল ছাড়লেন দীপক হালদার।
এই প্রেক্ষিতে দলত্যাগী বিধায়কদের প্রতি এদিন আক্রমণাত্মক ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়!


অন্যদিকে, মঙ্গলবার বারুইপুরে সভা করবেন বিজেপি নেতা শোভন চট্টোপাধ্যায়, শুভেন্দু অধিকারী ও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো বিজেপি নেতারা! সূত্রের খবর, সেই সভাতেও অনেকে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেবেন।


দীপক হালদারকে নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে ওঠে ২০১৯-এর নভেম্বরে ফেসবুকে করা এই পোস্ট ঘিরে...সেখানে দুটি জায়গায় তিনি লিখেছিলেন, ‘ডায়মন্ড হারবারে নতুন বিধায়ক তৈরি হয়েছেন। ...গণদেবতারা সব দেখছেন, ঠিক সময়ে উত্তর পেয়ে যাবেন।’ ডিসেম্বরের মাঝামাঝি আবার দীপক হালদারের সমর্থনে বিভিন্ন জায়গায় ফ্লেক্স টাঙান ‘দাদার অনুগামী’রা। এরপর সংবাদমাধ্যমের সামনে দলের একাংশের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলেন দীপক হালদার। তিনি গতবছর একবার বলেছিলেন, ‘‘সাড়ে চার বছর ধরে কাজ করার সুযোগ পাইনি। কাজের পরিবেশ ছিল না, কেন তা জানি না।’’


এমনকী ২৭ ডিসেম্বর, ডায়মন্ড হারবারে দলের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাতেও তাঁকে দেখা যায়নি। তবে তাঁর বিজেপিতে যাওয়ার জল্পনা তৈরি হয় জানুয়ারির ৫ তারিখ। যেদিন তিনি হঠাৎই হাজির হন বিজেপি নেতা শোভন চট্টোপাধ্যায়ের গোলপার্কের ফ্ল্যাটে। দীর্ঘক্ষণ কথাও হয় তাঁদের ৷ যদিও দীপক হালদার চলে গেলে তৃণমূলের কোনও ক্ষতি হবে না বলে দাবি করছে জেলা নেতৃত্ব। দক্ষিণ ২৪ পরগনার তৃণমূলের যুব তৃণমূল সভাপতি শওকত মোল্লা বলেন, ‘‘৫ বছরে কোনও উন্নয়ন হয়নি। মানুষ ওনার পাশে নেই। কোথায় গেলেন, তাতে কিছু যায় আসে না।’’


তৃণমূল ছাড়লেও বিধায়ক পদ ছাড়ছেন না দীপক হালদার। তিনি জানিয়েছেন, মানুষের হয়ে কাজ চালিয়ে যেতে চান। তাহলে আসন্ন বিধানসভা ভোটে কি বিজেপির হয়ে লড়তে দেখা যাবে তাঁকে? দীপক হালদারকে নিয়ে শুরু নতুন জল্পনা।